মাস্ক ব্যবহারে যেমন উদাসীনতা লক্ষণীয়, তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানা হচ্ছে না বিশিনিষেধ; তিন চাকার যানে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে গাদাগাদি করে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। কিছু লোকের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও সেটা থুতনিতে কিংবা কানের সঙ্গে ঝোলানো ছিল। গ্লাভস দেখা যায়নি কারো হাতে।
বাগআঁচড়া সাতমাইল গ্রামের মামুনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দম লেগে যায়; মনে হয় করোনায় ধরেছে; তাই মাস্ক বাড়ি রেখে আইছি।”
বড়আঁচড়া গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, “মাস্ক আছে।ভুলে বাড়ি রেখে আইছি।তাছাড়া মাস্ক পরতে কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হয়।এবার থেকে কাছে রাখব।”
নাভারনের বাবর আলি বলেন, “মাস্ক আছে পকেটে।কাছে রাখিছি।মুখি দিলি চশমা ঘুলা হয়ে যায়।তাই মুখ থেকে খুলে রাখিছি।”
একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি রিপন মাহমুদ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য মাস্ক পরা উচিত; কিন্তু আমার এসব ভালো লাগে না। মাস্ক পরলে নাক মুখ ঘেমে একটা অস্বস্তি ভাব তৈরি হয়। তাই প্রায়ই মাস্ক ছাড়াই চলাচল করি।”
কলা বিক্রেতা আজগার আলির মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে বলেন, “আল্লাহ ভরসা। মরণ তো একদিন আইবোই। ঠুসি দিলে কাস্টমারের লগে কথা কইতে কষ্ট হয়।”
জামতলা বাজারে বাজার করতে এসেছেন সদ্য অবসরে যাওয়া ব্যাংকার আজিবর রহমান।
তিনি বলেন, “আমি তো মাস্ক পরে এসেছি; কিন্তু আরেকজন তো পরেনি। সে তো আমার কাছে চলে আসছে। তার কাছ থেকে দূরে সরতে গেলে আবার আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছি।এটা খুবই অসংগতিপূর্ণ একটা পরিবেশ। আমাদের সবারই উচিত এ সময় একটু সাবধান হয়ে চলাফেরা করা;কিন্ত কে শোনে কার কথা!”
স্কুল শিক্ষক লিয়াকত আলী বলেন, “মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের প্রথমার্ধে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত টহল ছিল।ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মত; কিন্তু এখন অনেকাংশেই সেটা অনুপস্থিত। এ জন্যই মানুষ এভাবেই বাইরে বেরুচ্ছে।”
নানা প্রযুক্তির উদ্ভাবক শার্শার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমি ১৩শ মাস্ক বিতরণ করেছি।যারা আমার থেকে মাস্ক নিয়েছে, তাদেরও তো এখন মাস্ক বাদে ঘুরতে দেখছি।এখন বুঝছি, ওরা আসলে রোগের ভয়ে না পুলিশ আর্মির ভয়ে মাস্ক লাগাত।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়। তবে সে আহ্বান মানছেন না অনেকেই।
এদিকে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সীমিত আকারে শার্শার বাজার খুলে দেওয়া হলেও সেখানে নিয়ম মানছেন না কেউ।চায়ের দোকানসহ সকল দোকানপাট বেলা ৪টার পরে বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও খোলা থাকছে রাত অবধি।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সীমিত আকারে শার্শার বাজার খুলে দেওয়ার পর তা মনিটরিং করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ওইদিকে নজর দিতে গিয়ে এদিকে একটু শিথিল হয়েছে তবে এখন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।এছাড়া জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহন চলাচল করবে।
তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার ও সরকরি নির্দেশনা পালনে আগের মতোই উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।