ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় ভাঙন: গাইবান্ধায় `শতাধিক’ বাড়ি বিলীন

উজানের ঢল আর বৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধিতে গাইবান্ধায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 01:40 PM
Updated : 2 June 2020, 01:40 PM

গত কয়েক দিনে গাইবান্ধা সদরের গোঘাট, সুন্দরগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর ও সাঘাটা উপজেলার বরমতাইড়, মাঝিপাড়া এবং দক্ষিণ উল্যার আদর্শগ্রামের শতাধিক ঘড়বাড়ি, কয়েকশ’ একর ফসলি জমিস এবং অসংখ্য গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এতে আশ্রয়হীন হয়ে চারশ’র বেশি মানুষ তাদের স্বজনের বাড়ি, সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে আরও অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়া মানুষের এক হৃদয়স্পর্শী দুর্ভোগের চিত্র। কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউবা নদ থেকে দূরে নতুন করে এক চালা ঘর তুলছেন।

এদিকে গৃহহীনরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিলেও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

এছাড়া ভাঙনে নলকূপ ও টয়লেট বিলীন হওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং পয়নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী (৫০) বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে আমার বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ভেসে গেছে ঘরে থাকা ধান ও চাল কিন্তু ভাঙন রোধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ওই গ্রামের তহিরন নেছা (৪৫) বলেন, “নদী হামার ঘরে সবকিচু কারি নিচে। এ্যাকনা ঘর আচিলো, তাও তিনদিন আগোত নদীত চলি গেচে। বেটির বাড়িত থাকপ্যার নাগচি। হামরা সোরকারের কাচে কিচু চাইনা, নদী ভাঙার হাত থাকি হামারঘরোক বাঁচাক। “

শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ফুট এলাকা নদীতে বিলীন হচ্ছে।

“এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।”

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের কৃষক সোনাউল্যা শেখ (৫০) বলেন, ভাঙনে আমার বসতভিটা ও ছয়বিঘা জমি ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক কোব্বাত আলী (৫৫) বলেন, ১০ দিনের ব্যবধানে আমার পাঁচবিঘা জমির ভুট্টা নদীতে চলে গেছে। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়।

“এখন আমরা কোথায় যাব, খাব কি?”

কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিন ২-৩ ফুট পরিমাণ এলাকা ভাঙছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।   

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের বরমতাইড় গ্রামের কৃষক আইজ উদ্দিন (৫৫) বলেন, “এ্যাক বচর আগোত হামরা গেরেসতো আচিনো। হামারঘরে জমাজমি, বাড়িভিটা সগি আচিলো। নদী ভাঙি হামরাঘরে একোন আর কিচুই নাই। দিনমজুরির কাম করি সংসার চালাই। “

তিনি আরও বলেন, “জীবন বাঁচাতে মানসের জাগাত এ্যাকনা ঘর তুলি আচিনো, তাকও সাতদিন আগে ভাঙি গেচে। তকন থাকি বানদোত ছাপরা (একচালা ঘর) তুলি আচি।”

ভরতখালী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল জানান, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে নদীতে বালুর জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করছেন। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

“ভাঙন আতঙ্কে ইতোমধ্যেই সহস্রাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর নিয়ে সরে গেছে।”

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, সদর উপজেলার গোঘাট ও সুন্দরগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর এলাকায় ভাঙন রোধে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ভাঙন রোধে শ্রীপুর এলাকায় ৪০১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহিদ জানান, নদী ভাঙন কবলিত সাঘাটার বরমতাইড়, মাঝিপাড়া এবং দক্ষিণ উল্যার আদর্শগ্রাম গত ১ জুন বিকালে পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।