হতদরিদ্রদের তালিকায় ‘চেয়ারম্যানের স্বজন’, তদন্তে কমিটি

করোনাভাইরাস মহামারীতে কর্মহীন হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ-উপহার দেওয়ার তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজনের নাম ঢোকানোর অভিযোগ তদন্ত করবে প্রশাসন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2020, 08:23 PM
Updated : 2 June 2020, 00:40 AM

কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলম মিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তদন্তে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

একই অভিযোগে এর আগে ব্রাহ্মণবড়িয়ার বিজয়নগর ও নবীনগর উপজেলায় দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এক ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ-উপহার হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

এজন্য সরকার ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরে এই নগদ সহায়তার সুবিধা পাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ।

এ কাজের জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টি উপজেলার ৭৫ হাজার পরিবারকে এই ঈদ উপহার দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।  

মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের করা ৫৮৮ জন সুবিধাভোগীর তালিকায় চেয়ারম্যান আলম মিয়ার ছেলে, আপন দুই ভাই ও বোনসহ পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যাচাই-বাচাই করেই সর্বশেষ তালিকা পঠিয়েছি। আজ [সোমবার] দুপুরে একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করলে বিষয়টি আমি জানতে পারি। ঘটনার সত্যতা যাচ্ইা করার জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”

অভিযোগ প্রমানিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তার পরিবারের লোকজনদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে ইউএনও জানান।

মাসুদ উল আলম আরও বলেন, এখনও কেউ টাকা পাননি। আর যদি কেউ পেয়ে থাকেন এ ব্যাপারেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অনন্ত সুজন বলেন, “তালিকা নিয়ে লোকজন অভিযোগ করার পর আমি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তার কার্যালয়ে আমার সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ।”

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম মিয়া বলেন, “তালিকায় বোনের নাম নেই, দুই ভাইয়ের নাম আছে। আমার চাচাত ভাই একটা গরীব আছে, এজন্য তার নাম দিয়েছি।”

তবে তালিকায় নিজের ছেলের নাম নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এর আগে এই জেলারই দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি সদস্যকে একই ধরনের অনিয়মের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বরখাস্তরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূইয়া ও নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কবির আহমেদ এবং বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাহের মিয়া।

গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রজ্ঞাপান জারি করেছে।