লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যা: ভৈরব থানায় মামলা দায়ের

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীর গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় একটি মামলা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 06:55 PM
Updated : 31 May 2020, 06:55 PM

ভৈরব থানার ওসি মো. শাহিন জানান, উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মোবারক হোসেন বাদী হয়ে রোববার সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করেছেন।

মোবারক হোসেন লিবিয়ায় নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের (২৫) বড় ভাই। লিবিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের হাতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ভৈরবের আছেন ছয় জন। এ জেলার আরও চার জন আহতও হয়েছেন।

উন্নত জীবিকার সন্ধানে ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন ৩৮ বাংলাদেশি। বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানবপাচারকারীরা তাদের ত্রিপোলি নিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে এই ৩৮ বাংলাদেশি মিজদাহ শহরের কাছে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে জিম্মি হন।

গত বৃহস্পতিবার তাদের কাছে আরও টাকা দাবি করা নিয়ে একজন পাচারকারী খুন হওয়ার পর তার স্বজনরা গুলি করে ২৬ বাংলাদেশি ও চার আফ্রিকানকে হত্যা করে।

ওই ঘটনায় আহত ১১ জন সে দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন; আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই ব্যক্তি আত্মগোপনে আছেন।

ভৈরব থানার ওসি শাহিন জানান, ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের তানজিরুলকে মূল আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

আসামিদের বিরুদ্ধে প্রলুদ্ধ ও প্রতারণার মাধ্যমে মানবপাচার করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইতালী পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে অপহরণপূর্বক হত্যা ও আহত করার অভিযোগ আনা হয়।

তিনি জানান, মামলার আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মূল আসামি তানজিরুলের বড় ভাই বাচ্চু মিয়াকে আটক করা হয়েছে।

“পুলিশের সদরদপ্তর বিষয়টি সিআইডি, ডিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দিয়ে মনিটরিং ও তদন্ত করছে। খুব দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

তবে তদন্তের স্বার্থে এজাহারভুক্ত বাকি ছয় আসামি সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি ওসি শাহিন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভৈরব থেকে যাওয়া ছয় নিহতের মধ্যে পাঁচজন হলেন উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন আকাশ (২৫), একই ইউনিয়নের মৌটুপি খালপাড়া গ্রামের সৌরভ আহমেদ সোহাগ (১৯),  শিবপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী (২০), শ্রীনগর ইউনিয়নের নিহত সাকিব মিয়ার (২২) এবং পৌর এলাকার ঋষিপাড়ার রাজন চন্দ্র ঋষি (২৫)।

সাকিল নামের আরেকজনের বাড়ি ভৈরব বলে পররাষ্ট্র মনস্ত্রণালয়ের তালিকায় উল্লেখ থাকলেও ঠিকানা লেখা নেই।

ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান বলেন, “অনুসন্ধান করে তালিকায় থাকা ভৈরবের পাঁচজনের পরিচয়ের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে তালিকায় থাকা সাকিলের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”

আহত চারজনের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবর নগর গ্রামের মাহাবুব মিয়া (২৬), শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের জানু মিয়া (২৪), একই গ্রামের মামুন মিয়া (২১) ও সাদ্দাম মিয়া (২৬)।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নিহত ও আহতরা স্হানীয় দালাল তানজিরুলসহ অন্যান্য দালালের মাধ্যমে ইতালী যাওয়ার জন্য লিবিয়া গিয়েছিলেন। তারা বাড়ি-ঘর, জমি-জমা বিক্রিসহ ধার দেনা করে ৪/৫ লাখ টাকা করে দালালদের দিয়ে লিবিয়া যান।

“কিন্ত ইতালী না পাঠিয়ে লিবিয়া পর্যন্ত নিয়ে তাদেরকে অপহরণপূর্বক জিম্মি করে বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে গত ২৮ মে মানবপাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গুলিতে তারা নিহত ও আহত হন।