বাগেরহাটে খুলল দোকানপাট, স্বাস্থ্যবিধি ‘উপেক্ষিত’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির বিধিনিষেধ শিথিলের মধ্যে বাগেরহাটে দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

অলীপ ঘটক বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 01:28 PM
Updated : 31 May 2020, 01:46 PM

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকে জেলা শহরসহ নয়টি উপজেলার সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জেলার সব দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ও জেলা প্রশাসন।

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিধিনিষেধ শিথিল করলে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে রোববার। একই সঙ্গে জেলায় জেলায় দোকানপাটও খুলেছে।   

রোববার সকালে জেলা শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, মেইনরোড, খানজাহান আলী সড়ক, ফলপট্টি মোড়, বণিকপট্টি,  নাগেরবাজার ও রেইল রোডে গার্মেন্টস, কাপড়, মিষ্টি, জুতা স্যান্ডেল, প্রসাধনী এবং কাটা কাপড়ের দোকানে স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপকভাবে লংঘনের ঘটনা চোখে পড়েছে।

বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্রে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মূখে মাস্ক খাকলেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। কাঁচা সবজিবাজার ও মাছ বাজারে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। ভিড় রয়েছে রাস্তায়ও।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই জেলায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত ব্যক্তি আসেন ফরিদপুর থেকে। এখন পর্যন্ত এই জেলায় নারী পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে মোট ২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরা সবাই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা।

“স্থানীয়ভাবে এখনও কারও শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। রোববার জেলার সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে।”

তিনি বলেন, সরকার যেহেতু অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই যারা জনসমাগমস্থলে আসবেন তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগমস্থলে আসবেন না, ঘরেরই থাকবেন। সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে না চললে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।

বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বাগেরহাট জেলার সব দোকানপাট খুলে দিয়েছে। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে। দোকানপাট খোলার প্রথম দিনেই অনেক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।

“এই রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটাই উপায় তাহলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাই স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল যেন সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।”

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, বাগেরহাটে রোববার সকাল থেকে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাজারে বাজারে মাইকিং করা হয়েছে। জেলার নয় উপজেলাতে ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারগুলোতে বাজার মনিটরিং করছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগেরহাট শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে রোববার সকাল থেকে জেলার প্রায় এক লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ও সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যবস্থা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা করতে বণিক সমিতির আওতাভুক্ত জেলার ৪৪টি সমিতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা যদি সরকারের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

দোকানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে শহরের বণিকপাট্টির কাপড় ব্যবসায়ী গৌতম সাহা বলেন, “এখন কাপড়ের দোকানে বেচাকেনা কম, ভিড়ও নেই। তাই দোকানের সামনে হাত ধোয়ার সাবান রাখা হয়নি। ঈদের দুদিন ভিড় ছিল সেসময়ে দোকানে হাত ধোয়ার সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছিলাম। তবে আগামীকাল থেকে আবার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখব।”
কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের জুতা স্যান্ডেল ব্যবসায়ী নয়ন সিকদার বলেন, “দোকানের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই ঠিক, তবে ক্রেতারা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দোকানে বসে কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য চেয়ার দূরে দূরে বসিয়ে দিয়েছি।”
ফল ব্যবসায়ী কালাম শেখ বলেন, “দোকানের সামনে দড়ি টাঙিয়ে রেখেছি; কিন্তু ক্রেতারা দূরত্ব না মেনে সামনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন।”
শহরে কেনাকাটা করতে আসা বেরমতা, গোটাপাড়া, কাড়াপাড়া গ্রামের একাধিক নারী ও পুরুষ ক্রেতারা বলেন, দোকানদাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দোকান খুলে বসেছেন। তাদের দোকানে ক্রেতাদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মুখে মাস্ক পরে এসেছেন এবং সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছেন।

তারা দোকানে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানটাইজার ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন বলেও জানান।