কোভিড-১৯: পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাংক কর্মকর্তা আক্রান্ত

বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের খবর অব্যাহত রয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2020, 04:36 PM
Updated : 30 May 2020, 06:41 PM

পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর হাতে এসেছে।

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সিলেটে র‌্যাব-পুলিশসহ ৭৪ জন আক্রান্ত

সিলেটে র‌্যাব-পুলিশ সদস্যসহ ৭৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।  

শনিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফলে তাদের পজিটিভ আসে। 

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় এর মধ্যে ৪৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। 

শনাক্ত হওয়া ৪৯ জন সিলেট সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৮ র‌্যাব সদস্যসহ ১৫ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন, বিশ্বনাথের ৮ পুলিশ সদস্য, জকিগঞ্জে ১৪ জন, জৈন্তাপুরে ৩ জন এবং বিয়ানীবাজারে ১ জন।

এদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল ফারুক জয় জানান, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা সবাই সিলেট জেলার বাসিন্দা।

সিলেট জেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৬ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন। 

ঠাকুরগাঁওয়ে একজনের মৃত্যু

ঠাকুরগাঁওয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে এক জন মারা গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় রেকর্ড ২৫ জন আক্রান্ত নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৯ জনে।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ তথ্য জানান ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মাহফজুর রহমান সরকার।

আক্রান্ত ২৫ জনের মধ্যে দুই শিশু, পুরুষ ১০ জন ও নারী ১৩ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় ১১ জন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ২ জন, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৪ জন, হরিপুর উপজেলায় ৩ জন ও রাণীশংকৈল উপজেলায় ৫ জন।

সিভিল সার্জন ডা. মাহফজুর রহমান সরকার বলেন, নতুন করে আক্রান্ত ২৫ জনের মধ্যে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা নারী গত ২৪ মে ঢাকা থেকে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ভোরে বেলা আসেন। সকাল ৭টার দিকে বাড়িতেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে ১০টার দিকে বাড়িতে গিয়ে ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ থেকে নমুন সংগ্রহ করা হয়। এরপর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জে চার পুলিশসহ আরও ১১ শনাক্ত

সিরাজগঞ্জ জেলায় চার পুলিশ সদস্যসহ আরও ১১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নয় পুলিশসহ জেলায় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ জনে।

শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানান সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শনিবার শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ থেকে ৯৪ জনের নমুনা রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ১১ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস পজিটিভ হলেও বাকি ৮৩ জনের নেগেটিভ এসেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ছয় জন, রায়গঞ্জের তিন, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার এক জন করে রোগী রয়েছেন।

আক্রান্ত চার পুলিশ সদস্য হলেন, সলঙ্গা থানার ওসি, এক সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ডিবি পুলিশের দু’জন কনস্টেবল। এ নিয়ে জেলায় মোট নয় জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের তাদের বাসায় কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরকেও চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ফরিদপুরে পুলিশ-স্বাস্থকর্মীসহ আরও ১০ জন আক্রান্ত

ফরিদপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তা, স্বাস্থকর্মীসহ আরও ১০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুর জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮০ জনে।

শনিবার বিকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ফরিদপুরে নতুন করে যে ১০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ভাঙ্গার ছয় জন। এছাড়াও চরভদ্রসন, বোয়ালমারী, সদরপুর ও নগরকান্দায় এক জন করে রযেছে। আক্রান্তের মধ্যে দুই নারী ও আট জন পুরুষ রয়েছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, যে পুলিশ কর্মকর্তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় উপ-পরিদর্শক (৩০)। তিনি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাসিন্দা।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।  বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তার চিকিৎসা চলছে।

এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী (২৯) রয়েছেন। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার রানী নগর উপজেলায়।

ফরিদপুরের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের  ১০,  গোপালগঞ্জে ৭ ও মাদারীপুরের এক জন রয়েছে।

নীলফামারীতে রেকর্ড শনাক্ত

নীলফামারীতে শনিবার একদিনের রেকর্ড ১৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে দুই শিশু ও একজন নার্স রয়েছে।

শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলার সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হল ১২৭ জনে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২৮ মে নীলফামারী জেলা থেকে ২৪৪ জনের নমুনা পাঠানো হয় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনিস্টিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এ- রেফারেল সেন্টারে। সেখান থেকে শনিবার বিকালে ১৯ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য আসে।

সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন,“শনিবার জেলায় ১৯ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে এক শিশু ও এক নার্সসহ পাঁচ জন, ডিমলায় দুই জন, ডোমারে এক শিশুসহ ছয় জন, জলঢাকায় তিন জন, কিশোরগঞ্জে তিন জন রয়েছে।

“তাদের নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি জানান,  গত ৭ এপ্রিল থেকে শনিবার ৩০ মে পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের মধ্যে সদরে ৫২ জন, সৈয়দপুরে ১৮ জন, ডোমারে ১৭, ডিমলায় ১৭, জলঢাকায় ১২ এবং কিশোরগঞ্জে ১১ জন রয়েছেন।

এর মধ্যে জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮ জন।

পটুয়াখালীতে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আক্রান্ত ৯

করোনাভাইরাসে পটুয়াখালীর গলাচিপার এক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নতুন করে নয় জন রোগী আক্রান্ত হয়েছেন।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় নতুন নয় জন আক্রান্ত হওয়ায় মোট ৫৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে জানান সিভিল সার্জন।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, এর মধ্যে গলাচিপার কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তাও আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত ৫৭ জনের মধ্যে পটুয়াখালী সদর, বাউফল ও দুমকি উপজেলায় একজন করে তিনজন মারা গেছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ২৫ জন বলেন তিনি।

পঞ্চগড়ে এক এএসআই ও এক হাজতি সুস্থ হলেন

পঞ্চগড়ে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও জেলা কারাগারের একন বন্দী করোনাভাইরাস সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ১২ জন করোনাভাইরাস সংক্রমণ মুক্ত হলেন।

সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান বলেন, “দুই দফায় পাওয়া ‘নেগেটিভ’ ফল অনুযায়ী শনিবার তাদের করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়।”

গত ১০ মে কারাবন্দী ব্যক্তি এবং ১৩ মে পুলিশের এএসআইর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের সর্বশেষ ফলাফল পাওয়া যায়। ওই এসআই পঞ্চগড় পুলিশ লাইন্সের মেডিকেল সেন্টারের আইসোলেশনে এবং কারাবন্দী ব্যক্তি কারা হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সিভিল সার্জন জানান, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণমুক্ত হওয়া ১২ জনের মধ্যে অধিকাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সেরে ওঠেন।

শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ২২৩ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ জন। তাদের মধ্যে ১৯ মে ষাটোর্ধ এক জন এবং ২৯ মে আশি ঊর্ধ্ব আরেকজন মারা যান।

শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ লাইন্সে গিয়ে করোনাভাইরাসমুক্ত এএসআইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও উপহার সামগ্রী দেন।

জেলা কারাগারের জেলার শফিকুল আলম বলেন, হাজতি আসামীর করোনা মুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের জানিয়েছে। তিনি গত ৩ মার্চ থেকে একটি চুরির মামলায় কারাগারে আছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ১৭ এপ্রিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় তিরনইহাট ইউনিয়নে ঢাকা ফেরত এক নারীর শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দুইবার তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসায় ৩ মে তাকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

গাইবান্ধায় আক্রান্ত ১৬ জন

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করোনাভাইরাসে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া কাপড় ব্যবসায়ীর সংস্পর্শে আসা ছয় জনসহ নতুন করে আরও ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ রোগে অক্রান্ত হল ৫৫ জন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মজিদুল ইসলাম জানান, শনিবার এ ১৬ জনের মধ্যে কাপড় ব্যবসায়ীর সংস্পর্শে আসা ৬ জনসহ ৮ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার খবর ঢাকা থেকে অবহিত করেছে।

শুক্রবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব থেকে ২ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, এক মসজিদের ইমাম, ৩ জন গার্মেন্টসের কর্মীর করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া বগুড়া পিসিবি ল্যাবে শুক্রবার রাতে ইউপি সদস্যসহ অপর এক যুবকের করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ জানান, তিনি সবাইকে সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।