কোভিড-১৯: বগুড়ার চাষী বাজার নিয়ে ‘চিন্তিত’ স্বাস্থ্য বিভাগ

বগুড়া শহরের মাছের আড়তের ‘চাষী বাজারে’ দোকানদার ও কর্মচারীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ চিন্তিত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2020, 05:06 PM
Updated : 29 May 2020, 05:06 PM

এই বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে বলে কয়েকজন নেতৃস্থানীয় দোকানি জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন গত ২৪ মে এই বাজার বন্ধ দেয়; কিন্তু পরে ইজারাদারের অনুরোধে শুক্রবার থেকে বাজারটি শহরের চার মাথায় ফের চালু করা হয়।   

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিনে বগুড়ায় ৮৭ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে চাষী বাজারেই রয়েছেন ৩১ জন।

“জেলায় এ পর্যন্ত ২৪০ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা যান এবং ১৮ জন সুস্থ হয়েছেন।”

চাষী বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দাস রঞ্জন নিজেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাষী বাজারে ১৫টি বড় মাছের আড়ত আছে। ওইসব আড়তে শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় তিনশ জন কর্মচারী কাজ করেন। চাষী বাজার থেকে শহরের ফতেহ আলী, কলোনী, বকশি বাজার, খান্দার বাজারসহ শহর ও শহরতলীর ২৭টি বাজারে পাইকাররা মাছ কিনে নিয়ে যান। এছাড়া জেলার সব উপজেলায় এই বাজার থেকেই মাছ সরবরাহ করা হয়।

এই বাজারের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায়ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেন, “উনার আড়তের ১৯ জন কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনেরই পজিটিভ পাওয়া গেছে। আমার দোকানের চারজন কর্মচারীর পরীক্ষায় চারজনেরই দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, অনান্য বাজারের পাইকারি মাছ ক্রেতাদেরও নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এখন বাজারটি বন্ধ থাকলেও এই বাজারের কর্মচারী, মালিকসহ মাছের পাইকাররা ঝুঁকিতে আছেন। অনেকে পরীক্ষা না করে বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

রবীন্দ্রনাথ গত ২৬ মার্চ নিজের ফেইসবুক পেইজে এই চাষী বাজার কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান।

ওইদিন ব্যবস্থা নিলে এই অবস্থা হতো না বলে তিনি মনে করেন।  

বগুড়া শহরের মালতিনগরের আতাউর রহমান, কলোনী এলাকার দানা তালুকদার, সুত্রাপুরের আব্দুল লতিফ বলেন, বগুড়ার মাছের বাজার এখন আতংক। চাষী বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে তারা আপাতত বাজারে গিয়ে মাছ কিনছেন না।

আতাউর রহমান বলেন, “কয়দিন মাছ না খেলে কী হবে! ওই চাষী বাজার থেকেই শহরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে শহরময়। আমরা আতংকে রয়েছি। দিন দিন শহরে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।”

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, “এমনিতেই গাড়ি চলাচল শুরু হলে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জনারণ্যে পরিণত হবে। তার উপর চাষী বাজারের আড়তদারদের এবং কর্মচারীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করে এখানে বাজার বসালে তা আরও ছড়িয়ে পড়বে।”

চাষী বাজারের নতুন অবস্থান চার মাথা এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে।

চাষী বাজারের ইজারাদারের ব্যবস্থাপক কানাই লাল জয় সোয়াল ময়না জানান, শুক্রবার থেকে চাষী বাজার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় বসানো হয়েছে।

নতুন স্থানে আড়ৎগুলোতে কারা মাছ বিক্রি করবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “চাষী বাজারের আড়তদার এবং কর্মচারীরাই সেখানে মাছ বিক্রি করবে।”

ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, “চাষী বাজারকে ‘হট স্পট’ হিসেবে নিয়ে আমরা এর সাথে সম্পৃক্ত মালিক, কর্মচারী এবং অনান্য বাজারের পাইকারী ক্রেতাদের নমুনা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসব। চাষী বাজারের ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।”

তিনি আরও বলেন, বগুড়ায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১৮৮টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন দুই শতাধিক নমুনা আসছে। দিন দিন নমুনা সংগ্রহ বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিদিনের নমুনার ফলাফল প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরীক্ষার আওতা বাড়ানো উচিত।

বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় চাষী বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে ইজারাদারের অনুরোধে বাজারটি স্থানান্তর করে শহরের চার মাথায় নেওয়া হয়েছে। 

সেখানে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার চালাবেন বলে প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান।