বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশন এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ।
উদ্ধার করার পর ওই কিশোরদের মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
এরা হলেন শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ইসাহাক খলিফার ছেলে জয় (১৬), ফারুক খলিফার ছেলে সাইমুন (১৬), শহিদুল খলিফার ছেলে জুবায়ের (১৭), শহিদুল খলিফার ছেলে মাইনুল ইসলাম (১৬), জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে রহিম (১৭) এবং পাশের রায়েন্দা বাজারের জাহাঙ্গীর খলিফার ছেলে ইমরান (১৯)।
পুলিশ সদরদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ধানসাগর লাগোয়া এলাকায় বনরক্ষীদের অফিস রয়েছে। পাশেই একটি ছোট খাল। খালের ওপারে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের সেতু আছে। তবে সেতুটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য নয়। সুন্দরবনের পাহারায় থাকা বনরক্ষীরা কেবল সেতুটি ব্যবহার করেন।
ওই কিশোরদের বরাত দিয়ে পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, এই ছয় কিশোর বনরক্ষীদের অগোচরে সেতু পার হয়ে খালের ওপারে চলে যান। এরপর গল্প করতে করতে তারা সুন্দরবনের ভেতরে হাঁটতে থাকেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে তাদের খেয়াল হয় বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু ততক্ষণে তারা পথ হারিয়ে ফেলে।
এরপর ওই কিশোরদের একজন জাতীয় জরুরি সেবার ফোন নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নামে।
এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া জয় সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির পাশে সুন্দরবন হলেও কখনও ভেতরে যাওয়া হয়নি। তাই বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তারা ছয় বন্ধু মিলে সুন্দরবনে ঘুরতে বের হন বুধবার সকাল ১০টায়।
“গল্প করতে করতে কখন যে পথ হারিয়ে ফেলেছি তা আমাদের মাথায় ছিল না। চারদিকে গাছপালায় ভরা। বাড়ি ফেরার পথ আর পাই না। পথ খুঁজতে খুঁজতে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায়। আমার কাছে মোবাইল ফোন থাকলেও তাতে কল করার ব্যালান্স ছিল না।
এই কিশোর বলেন, এরপর রাত গভীর হতে থাকে। সুন্দরবনে বাঘসহ নানা ভয়ঙ্কর জীবজন্তু রয়েছে। জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তারা একেকজন পাশাপাশি গাছের ডালে উঠে বসেন।
“সারারাত আমরা গাছের ডালে নির্ঘুম কাটিয়েছি। ভোর রাতের দিকে দূর থেকে মাইকিংয়ের শব্দ পেয়ে আমরা গাছ থেকে নেমে এগোতে থাকি।”
শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। কিন্তু এতবড় সুন্দরবনে কারও অবস্থান জানা সহজ নয়।
“অন্যদিকে, কিশোররা বনের ঠিক কোন অংশ থেকে হারিয়ে গেছে সেটিও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিল না। এর মধ্যেই ওই কিশোরদের সঙ্গে থাকা দুটি ফোন চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সচল ছিল কেবল একটি ফোন। সেটির মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল পুলিশ।
“কিশোরদের বনের মধ্যে হাঁটা-চলা না করে গাছে চড়ে বসার জন্য পরামর্শ দেয় পুলিশ। কারণ সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ওই অংশে বাঘের চলাচল আছে।”
ওসি বলেন, “উদ্ধার অভিযান শুরু করার কিছু সময় পরই শুরু হল বৃষ্টি। থানা পুলিশ ও ধানসাগর নৌ-পুলিশ স্থানীয়দের নিয়ে সুন্দরবনে তল্লাশি শুরু করে। আমরা সুন্দরবনে ঢুকে হ্যান্ড মাইকে তাদের কাছাকাছি আসার কথা বলতে থাকি। এভাবে মাইকিং করতে থাকায় হারিয়ে যাওয়া কিশোররা শুনতে পেয়ে আমাদের কাছে চলে আসে।”
উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে মিষ্টিমুখ করিয়ে তাদের অবিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে ওসি জানান।