মাদক বিরোধীর হাত-পা ভাঙার অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুবলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে মাদক বিরোধী এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ব্রাহ্মণবড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2020, 12:43 PM
Updated : 27 May 2020, 12:43 PM

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামূড়া গ্রামে মাদক পাচার রোধে এক সভার পরদিন এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মারাত্মক আহত আবু নাছের (৩৫) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেজামূড়া গ্রামের আবু শামার ছেলে আবু নাছের স্থানীয় আউলিয়া বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া।

বিজয়নগর থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, সেজামূড়া গ্রামের ঘটনায় আহত নাছেরের বাবা আবু শামা বাদী হয়ে ২৪ মে রাতে কাউসারকে প্রধান আসামি করে নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

“আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।”

আহত আবু নাছের হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে মাদক পাচারে জড়িত ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী সেজামূড়া গ্রামের মৃত বাদল ভূঁইয়ার ছেলে, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া ও তার চক্রের বিরুদ্ধে গত ২৩ মে বিকালে গ্রামের ৬০-৬৫ জন মুরুব্বি ও যুবকদের নিয়ে হুমায়ূন কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সভা করা হয়।”

সভা থেকে গ্রামের উপর দিয়ে মাদক পাচার করতে দেওয়া হবে না বলে সবাই মত দেন বলে জানান তিনি।

হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২৪ মে সকালে তার দাদি মারা যাওয়ায় কাফনের কাপড় কিনতে আউলিয়া বাজার যান তিনি। কাপড় কিনে বাড়ি ফেরার পথে নজরপুর গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা কাউসারসহ ১২/১৪ জন তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। সেখানে তাকে লোহার রড, শাবল ও কাঠের রোল দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

“হামলাকারিরা মৃত ভেবে পালিয়ে যায়।”

এরপর ব্যবসায়ীরা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

আক্ষেপ করে আবু নাছের বলেন, “মাদক পাচারকারী চক্রটির রোষাণলে পড়ে আমার ডান হাত ও ডান পা ভাঙলো। তাদের হামলার কারণে আমি আমার দাদির দাফনেও অংশ নিতে পারিনি।”

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবু কাউসার ভূঁইয়া বলেন, “আমি মাদক কারবারের সাথে জড়িত নই।“

প্রতিবেশী নাছেরের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নাই উল্লেখ করে কাউসার বলেন, “আমার চাচাত ভাইদের সঙ্গে সেদিন (২৩ মে) তার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না।”

অন্যদিকে, পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও একই গ্রামের বাসিন্দা বাসির মিয়া বলেন, “যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে আবু কাউসার ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচার করে এবং এলাকায় একাধিক মাদকের স্পট চালিয়ে আসছে।”

এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট কাউসার হামলা চালিয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।

“ওই দিন বিজয়নগর উপজেলা পরিষদে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে গোয়ালনগর সড়কে কাউসার ও তার বাহিনীর লোকেরা আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে মোবাইলফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।”

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাপে আপোষ-মীমাংসা করেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

“ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের কারণে কাউসারের বিরুদ্ধে কেউ কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।“

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়পুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বলেন, “কাউসারের মাদক ব্যবসা ও নানা অপকর্ম সম্পর্কে সবাই জানেন। তবুও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেউ।

“ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলার কারণে সে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে।”