মৌসুমী আক্তার (২২) নামের ওই পোশাককর্মী পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে। একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী।
গত রোববার রাতে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ।
পরে লালমনিরহাট পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পাটগ্রামে সোমবার মৌসুমীকে দাফন করা হয়।
এই লাশবাহী গাড়ির চালকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ছয় মাস আগে পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হওয়ায় তিনি গাজীপুর জেলায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন।
মোস্তফা বলেন, তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার গাজীপুর থেকে ট্রাকে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেন। গাড়িতে উঠে মৌসুমী তাকে ফোনে জানান। কিন্তু মেয়ে বাড়ি পৌঁছায়নি। পরদিনে শুক্রবার রংপুর মেডিকেলে একটি লাশ আসার খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে মেয়েকে শনাক্ত করেন।
“বৃহস্পতিবার রাতে রংপুরের তাজহাট এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতানে নিয়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।”
মোস্তাফা বলেন, মেয়ের মরদেহ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে মোবাইলে জানালে মেয়েটি করোনাভাইরাস আক্রান্ত ভেবে সেখানে নিতে নিষেধ করেন এবং নিলে পরিবার ও মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, এরপর তিনি মেয়ের মরদেহ দাফন করতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার একটি লাশবাহী গাড়ি চালককে দায়িত্ব দেন পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে; এবং তাকে ওই টাকা পরিশোধও করে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
“দুইদিন পর স্থানীয়দের কাছে খবর পাই রোববার রাতে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে আদিতমারী থানা পুলিশ। সোমবার ঈদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ মরদেহটির জানাজা শেষে আদিতমারী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেয়।”
মোস্তফা বলেন, খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আদিতমারী থানা ও পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় পাটগ্রামের নিজ এলাকায় মেয়ের লাশ দাফন করেন।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও দুঃখজনক। সরকারি ব্যাগে মোড়ানো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার বাবার অনুরোধে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন মোহন্ত বলেন, লাশটি পাটগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।