ঈদ: আয় নেই বোঝে না অবুঝ শিশুরা

বরিশাল নগরীর গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা রুস্তম আলী। বিবিরপুকুর পাড়ে ছিল তার চটপটির দোকান। দুই মাস ধরে বন্ধ তার ক্ষুদ্র এ ব্যবসা। ঈদ দূরে থাক, এখন সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে তার।

কাওছার হোসেন বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2020, 06:56 PM
Updated : 24 May 2020, 06:57 PM

রুস্তম আলী জানান, চটপটি বিক্রি করে প্রতিদিন তার লাভ থাকত ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। ঘর ভাড়া ও দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে ভালোই চলছিল চার সদস্যের সংসার। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর সরকারি লকডাউন সব ওলটপালট করে দেয়।

রুস্তম বলেন, “জমানো টাকা যা ছিল সব শেষ। সিটি কর্পোরেশন থেকে চাল-ডাল দিয়েছিল তা দিয়ে ৫/৬ দিন চলেছে। এখন ঘরে খাবার নেই বললেই চলে। প্রতিবেশীরা সাহায্য করছে তা দিয়েই কোনোভাবে চলছে।”

একই অবস্থা সোনা মিয়ার পুলি এলাকার ইলেকট্রিশিয়ান আমীর সোহেলের। কাজ নেই দীর্ঘ দিন ধরে। তাই আয়ও বন্ধ।

সোহেল বলেন, “পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার-দেনা করে কোনোভাবে সংবাদ চলছে।

“জমজ দুই শিশুকন্যার তা বোঝার বয়স হয়নি এখনো। তাই ঈদে নতুন জামার বায়না তাদের। দোকান বন্ধ বলে কোনোভাবে বুঝ দিয়েছি। ওয়াদা করেছি কোরবানিতে নতুন জামা কিনে দেব।”

ঈদের দিন সকালে দুই সন্তানের মুখে একটু ভালো খাবার কীভাবে তুলে দেবেন সেই চিন্তায় আকাশ ভেঙে পড়েছে আমীর সোহেলের মাথায়।

বরিশাল নগরীর চকবাজারে এক তৈরি পোশাক দোকানের কর্মী মিলন হাওলাদার। প্রতি বছর রমজান মাস জুড়ে ভালোই বেচাকেনা হয় তাদের দোকানে। চাঁদ রাতে বেতন ও বোনাসের টাকায় বিধবা বোন, তার ছেলে, মা-বাবা ও নিজের জন্য ঈদের পোশাক কিনতেন মিলন।

মিলন বলেন, “সরকারি ঘোষণার পর ২/১ দিন দোকান খোলা ছিল। পরে ডিসি অফিস থেকে পুনরায় দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বছর বোনাস তো দূরের কথা বেতনও পাই নি।”

রুস্তম আলী, আমীর সোহেল, মিলনের মতো হাল বরিশালের প্রতিটি নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে ঘরে।

তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জানান, প্রথম দফায় বরিশাল নগরীর ৬০ হাজার পরিবারকে চাল, ডাল, আলু সহ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।

“ঈদের পরে পুনরায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সহায়তা প্রত্যেকটি দরজায় দরজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাদের কিনে খাওয়ার সামর্থ আছে তারা ফিরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।”

ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, জেলার কয়েক লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। যারা প্রকাশ্যে ত্রাণ নিতে লজ্জাবোধ করছেন তাদের ঘরে রাতের আঁধারে ত্রাণ পৌছে দেওয়া হয়েছে।

পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “কেউ না খেয়ে মারা যাবে না।”

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে অনেক এলাকায় বাড়িঘর, ফসলের মাঠ ও মাছের ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে খুব শিগগিরেই তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার আড়াই হাজার টাকা অনেকেই পেয়েছেন। জেলার লক্ষাধিক মানুষের মোবাইলে মোবাইলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ উপহার পৌছে যাবে।

অসহায় মানুষদের মাঝে সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছেন বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমও।

তিনি জানান, এরই মধ্যে ২০ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়েছেন। এজন্য একটি টিমও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা ফোন পাওয়া মাত্র খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মানুষ দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন।