রোগ-ঝড়ে ভেসে গেছে চরের ঈদ

বাইরে করোনাভাইরাস আর ঘরে ক্ষুধার সাথে লড়াই করা ঝালকাঠির চরবাসীর ঈদের কোনো আয়োজন নেই।

পলাশ রায় ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2020, 02:46 PM
Updated : 24 May 2020, 02:53 PM

এর উপর বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে সুপার সাইক্লোন আম্পানের ঝাপটাও লাগে এসব চরে।

ঝালকাঠি শহরের নতুন চর, কাঠপট্টি, কলাবাগান, পূর্বচাঁদকাঠিসহ সুগন্ধা নদী পারে বাস পাঁচ হাজার পরিবারের। শ্রমজীবী এসব পরিবারের নারী-পুরুষ সবাইকে রোজগারে নামতে হয়।

পুরুষদের বেশিরভাগই রিকশা চালক। কেউ কেউ ভাঙ্গারি কুড়ান, আবার কেউ কেউ হোটেল রেস্তোরাঁয় শ্রম বেচেন। দিনমজুরও আছেন অনেকে। নারীদের বেশিরভাগই বাসা-বাড়ির গৃহকর্মী।

রোববার বিকালে শহরের সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ পৌর খেয়াঘাট এলাকায় সরেজমিনে চোখে পড়ে-খুপড়ি ঘরের সামনে উদাস দৃষ্টিতে শিশুদের নিয়ে বসে আছেন অনেকে। অনেকের ঘরের ভেতর কাঁদা জলেরও চিহ্ন এখনও স্পষ্ট।

শহরের কাঠপট্টি এলাকার সুগন্ধা পারের নারী শ্রমিক নারগিস আক্তার বলেন, আম্পানের জোয়ারে ঘরে পানি হাটু পানি ওঠে। সারা রাত আশ্রয় কেন্দ্রে থাকি। আমাগো কী আর ঈদ আছে। বাঁচাতে পারমু কি-না জানি না।

ছোট্ট চায়ের দোকানদার কালু মিয়া বলেন, “করোনায় ম্যাজিস্ট্রেটের ভয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় দোকান বন্ধ রাখি। পেটের দায়ে মাঝেমধ্যে দোকান খুলি।

ঝড়ে তার দোকানের চাল উড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনা আর আম্পানে আমাগো আবার কিসের ঈদ?”

শহরে সুগন্ধা পাড়ের রিকশা চালক যুবক আরিফ হোসেন জানান, দুই মাস ধরে জেলা শহরের রিকশা চলাতে দেওয়া হচ্ছে না। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আটকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চালানোরও উপায় নেই।

“ঘরে বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী ও ছোট মেয়ে আছে। ছোট মেয়েটাকে ঈদে কিছু কিনে দিতে পারিনি। এক সাংবাদিক দুধ-সেমাই আর চিনি কিনে দিছে।”

দুই মাস ধরে বন্ধ রেস্তোরাঁ থাকার কথা পেড়ে হোটেল শ্রমিক বাবর আলী বলেন, “মানসে ত্রাণের চাউল দেছেলে। হেয়া দিয়া গোন্দ আয়, খাইতে পারি নাই।

“আতে টাহা পয়সা নাই। ঈদের কতা চিন্তায় আয় না, সামনের দিনগুলা কেমনে পার করমু-চিন্তায় গুম আয় না “

গৃহকর্মী রেনু বেগম বলেন, “করোনা শুরু হওয়ার পর আফায় (গৃহকর্ত্রী) অর্ধেক মাসের বেতন দিয়ে উঠাইয়া দেছে। এহন আর বাসা-বাড়িতে কাজ-কাম নাই।

“ফাঁকে ফাঁকে ভাঙ্গারি টোকাইতাম-হেয়াও বন্ধ। কী করমু, কী খামু কইতে পারি না “

গত ১১ এপ্রিল ঝালকাঠি সদর উপজেলায় একই পরিবারের তিনজনের প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর জেলার ৪ উপজেলাতেই শনাক্ত সংখ্যা বাড়তে থাকে।

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডাক্তার শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার জানান, এ পর্যন্ত জেলায় পুলিশ, চিকিৎসক, ইউপি সদস্যসহ মোট ৩৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এক পোশাক শ্রমিক মারাও গেছেন।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী জানান, ঈদ উপলক্ষে বাস শ্রমিক অনেক শ্রজজীবীদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পৌর সভাও খাদ্য দিয়েছে।

পৌরসভার চরে বাস করেন আবাসিক বোর্ডিং (হোটেল) কর্মচারী মো. মোস্তফা।

তিনি বলেন, প্রতি বছর সাধ্যমত আব্বা আর ছোট ছেলে-মেয়েদের জামা-কাপড় কিনে দেই। ঘরে ভালো খাই। গরিব হলেও ঘরে ঈদের আনন্দ থাকে।

“এ বছর করোনায় বেকার হয়ে পড়েছি। ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওরা তো বোঝে না করোনা কী।“