আম্পানে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আর উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে শুরু করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2020, 07:34 AM
Updated : 21 May 2020, 12:24 PM

সুপার সাইক্লোন আম্পান শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে।

ঝড়ের মধ্যে প্রাণহানি ছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, খামারের মুরগি মরে গেছে, মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে, বহু গাছপালা ভেঙে পড়েছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানাবেন।
 
আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৫টায় এই দুর্যোগ পরবর্তী সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চুয়াডাঙ্গা

জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে বহু কাঁচাঘর, গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে ক্ষেতের ফসলের। অনেক পানবরজ ভেঙে পড়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। পানের বরজ ও ক্ষেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক নিচু স্থানে পানি জমেছে। এতে ফসলের কিছু ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক রকিব হোসেন বলেন, তাদের গ্রামের কয়েক শ পানের বরজ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বরজ একেবারে ভেঙে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান জানান, কলা, পেঁপে, সবজি, পান প্রভৃতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। আমবাগানেও ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে অনেক আম পড়ে গেছে। দু-চার দিন পরই চুয়াডাঙ্গার আম বাজারে আসার কথা ছিল। তার আগেই ক্ষতি হয়ে গেল।

চুয়াডাঙ্গা ঝড়ের গতি সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার ছিল বলে জেলা আবওহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. খাইরুল আনাম বলেন, এ জেলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দুর্যোগ প্রস্তুতি হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় তিনটি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এবং বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায় আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছিল।

“রাতে কয়েকজন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন। সকালে তারা আবার চলে গেছেন।”

বেনাপোল

যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগআঁচড়া এলাকায় যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ওপর বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে বাস বন্ধ থাকলেও এখন পণ্যবাহী যানও চলতে পারছে না।

নীলকান্ত মোড় সাতমাইল সামাজিক বনায়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জামতলা থেকে সাতমাইল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় অসংখ্য গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়ায় রাত থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে সারাদিন লেগে যাবে।

বরগুনা

জলোচ্ছ্বাসে বরগুনার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেক মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম ও ভুট্টাক্ষেত।

পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মন্মথ রঞ্জন খরাতী বলেন, তার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই গ্রামের মাছের ঘের ভেসে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দুই গ্রামের অন্তত ২০০ একর জমির মুগডাল সম্পূর্ণ তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাতে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। তবে পানি শিগগির নেমে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক জায়গায় মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, সদর উপজেলায় একটি মুরগি খামারের ৮০০ মুরগি জলোচ্ছ্বাসে মারা গেছে। এতে ওই ব্যক্তির লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তালতলী উপজেলার একটি গাভীর খামারে ক্ষতি হয়েছে প্রায় প্রায় আড়াই লাখ টাকার। আরও অনেক খামারে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা ঝড়ের পর সদর উপজেলার নিশানবাড়িয়া ও চালিতাতলা এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এলাকায় কিছু গাছপালা ভেঙে, উপড়ে পড়েছিল। তা তারা অপসারণ করেছেন।

এছাড়া তিনি বেতাগী উপজেলার বদনিখালী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন জানিয়ে বলেন, এসব এলাকায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, তারা আগে থেকেই সতর্ক থাকায় এবং যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ায় এ জেলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবু কিছু ক্ষতি হয়ে থাকলে তার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎহীন রয়েছে জেলার অনেক জায়গা।

বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলার গাব্বাড়িয়া, পদ্মা, খলিফার হাট, মাছের খাল, কালমেঘা, কাঁঠালতলী, সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িরচর, ছোট লবণগোলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকে। এছাড়া বামনা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, পূর্ব সফিপুর ও বামনা লঞ্চঘাট, অযোদ্ধা, কলাছিয়া বড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী

জেলার হাতিয়া উপজেলায় জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে ও রাতে দুই দফায় চার ইউনিয়নের কয়েকটি বেড়িবাঁধে এই ভাঙন দেখা দেয়।

বুধবার রাত ৮টা থেকে ধমকা হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি শুরু হলে সদর উপজেলা, সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট এলাকায় কিছু কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়। ভেঙে পড়ে গাছপালা। জেলা শহর মাইজদীসহ জেলার সব উপজেলায় বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। অনেক সময় বন্ধ ছিল মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা।

বাগেরহাট

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে চার হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে তিন শতাধিক বাড়িঘর।

এছাড়া আউশের বীজতলা ভেসে, বেড়িবাঁধ ভেঙে, গাছপালা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ প্রাথমিক তদন্তের তথ্য দিয়ে বলেন, বুধবার রাতের এ ঝড়ে ৩৫০টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, প্লাবিত হয়েছে ২০০ বাড়িঘর, আর চার হাজার ৬৪৯টি বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

সব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ করছে বলে তিনি জানান।

জেলার রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক বলেন, আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে চার হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের ভেসে গেছে বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। এতে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে হিসাব করা হয়েছে।

বাগেরহাটে ৭৮ হাজার ১০০টি মাছের ঘের রয়েছে বলে তিনি জানান।

আউশের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন সবজিরও ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, জলোচ্ছ্বাস ও অতিবর্ষণে মাঠের গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আউশ ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

রঘুনাথ বলেন, জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে পাট, সাড়ে তিন শ হেক্টরে আউশ ধানের বীজতলা, এক হাজার ১০০ হেক্টরে পান ও চার হাজার হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, কোথাও কোথাও ভেড়িবাঁধ ও রাস্তা উপচে এবং কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এতে ঘেরের মাছ বেরিয়ে গেছে।

মাগুরা

বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাত পর্যন্ত টানা ঝড়ের সাথে ভারি বর্ষণে মাগুরায় ঘর-বাড়ি, গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠে থাকা লিচু, আম, পেপে, কলা, ধান, শবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম ও জেলা পরিষদ চেয়াম্যান পংকজ কুন্ডু’র দাবী স্মরণকালে দীর্ঘস্থায়ী এ ঝড়ে সব মিলিয়ে জেলায় ক্ষতির পরিমান কমপক্ষে শত কোটি টাকা।

সদরর উপজেলার হাজরাপুর কৃষক উন্নয়ন সমিতির সদস্য কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার হাজীপুর, হাজরাপুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়ন, আঠারখাদা, মঘি ও মাগুরা পৌরসভার কিছু এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ হাজারের ওপরে বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। লিচু, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে ইত্যাদি। এর মধ্যে শুধু লিচুবাগান রয়েছে প্রায় সাত হাজর।

“আম্পানের তাণ্ডবে গোটা এলাকার সব ফল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবছর এ এলাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার আম-লিচু বিক্রি হয়। এসব চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কারণ এসব ফল বিক্রির টাকায় তারা সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা চালান।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, এ জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে লিচু, ১৩০০ হেক্টরে আম, ৭০০ হেক্টরে কলা, ৬০০ হেক্টরে পেঁপে, ৬২০ হেক্টরে কাঁঠাল, ২০০ হেক্টরে নালিম, ৭২০ হেক্টরে মুগডাল, ২৭২০ হেক্টরে বিভিন্ন সবজি, ২৮২০ হেক্টরে তিল ও ৩৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

“এর মধ্যে পেঁপে ও কলা প্রায় শত ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।”

আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন বলে জানান জাহিদুল আমিন।

জেলা প্রশাসক আশাফুল আলম বলেন, শত-শত কাঁচাবাড়ি আধাপাকা বাড়িঘর, গাছপালা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পেঁপে, কলা, আম, সব্জিসহ মাঠের ফসলের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুণ্ড বলেন, “স্মরণকালে এমন দীর্ঘস্থায়ী ঝড় আর দেখি নাই।”

ভোলা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চরপাতিলা, চরনিজাম, মনপুরার কলাতলীরচর, দৌলতখানের মদনপুরসহ বেশ কিছু এলাকা। তবে পানির চাপ কম।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, বেড়িবাঁধের কিছু পয়েন্টে আংশিক ক্ষতি হতে পারে। তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

পিরোজপুর

এ জেলায় দুই হাজার ৩৪৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের তথ্যে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এছাড়া ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ ও ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৪০০ নলকূপেরও ক্ষতি হয়েছে। মাঠের ফসলে ছয় কোটি টাকার এবং গবাদিপশুর খামারে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি বলেন, জলোচ্ছাসে জেলায় ছয় হাজার ৭৫৫টি মাছের ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেহেরপুর

জেলায় কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, ফসল, বৈদুতিক খুঁটি ও গাছপালার ‘ব্যাপক’ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আতাউল গনি।

তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তথ্য যাচাইয়ের কাজ করতে জেলা প্রশাসন, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি বিভাগ মাঠে নেমেছে। জেলায় প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সব বন্ধ ছিল।

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীতে আট হাজার ১২১ বাড়িঘর আংশিক এবং দুই হাজার ৩৫৫টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকায় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বিপৎসীমার প্রায় ছয় ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় অনেক জায়গায়।

প্রকৌশলী বলেন, জলোচ্ছ্বাসে জেলায় আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের ভাজনা, দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের বুড়ির কান্দা এলাকার বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত মেরামতের জন্য কাজ শুরু করা হবে বলে জানান প্রকৌশলী।

কুষ্টিয়া

গাছপালা, ঘরবাড়ি, কৃষিসম্পদের ক্ষতি করে কুষ্টিয়া অতিক্রম করেছে আম্পান। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। তার অর্ধেক চাষিরা কাটতে পারলেও বাকিটা এখনও মাঠে রয়েছে। ঝড়ে মাটিতে পড়ে গেলেও পানি সরে গেলে তা কাটা যাবে। তবে সব্জি, আমসহ অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা যায়নি। জানার জন্য মাঠকর্মীরা কাজ করছেন।

পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক আরিফুর রহমান বলেন, “আম্পানের তাণ্ডবে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ির আংশিক এলাকাজুড়ে বৈদ্যুতিক লাইনের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে।”