সংক্রমণ ঝুঁকি উপেক্ষিত, নীলফামারীতে চলছে ঈদের কেনাকাটা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি উপেক্ষা করে নীলফামারী শহরে বিপণি কেন্দ্রগুলোতে চলছে ঈদের কেনাকাটা।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 06:45 PM
Updated : 20 May 2020, 06:45 PM

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৪ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি উপেক্ষা করে জেলা শহরের কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন সাগ্রীর বিপণি কেন্দ্রগুলোতে দলে দলে ছুটছে শিশুসহ নারী, পুরুষ সবাই। প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখে নেই মাস্ক, মানছে না শারীরিক দূরত্ব। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই যে দেশে করোনাভাইরাস মহামারী চলছে।

বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে নীলফামারীর পৌর সুপার মার্কেট, বড়বাজার, বড়মসজিদ সড়ক, হাজী মহসিন সড়কের বিপণি কেন্দ্রে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। এসব মার্কেটের অনেক দোকানের মালিক-কর্মচারীর মুখে মাস্ক কিংবা হাতে নেই গ্লাভস দেখা যায়নি। একই অবস্থা ক্রেতাসাধারণেরও।

নীলফামারী পৌর সুপার মার্কেটে মুনেম ফেব্রিক্সে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন সদর উপজেলার চড়াইখোরা ইউনিয়নের বাবড়িঝাড় গ্রামের আবুল কালাম (৪৫)। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও তিন সন্তান, যাদের কারও মুখে মাস্ক ছিল না।

মাস্ক না পরার বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, “মাস্ক পরতে অস্বস্তি লাগে। পরিবারের অন্য সদস্যরা সাথে করে মাস্ক নিয়ে এসেছে। দোকানে কথা বলার অসুবিধার কারণে সকলে মাস্ক খুলে পকেটে রেখেছে্।”

তবে ওই দোকানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত  ধোওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও অনেক ক্রেতাদের অনীহার কারণে এসব কম ব্যবহার হতে দেখা গেছে।

শহরের মড়াল সংঘ মোড়ে বেবী কর্ণারে ১০ বছর ও সাত বছর বয়সী দুই শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে পোশাক কিনতে দেখা যায় সদর উপজেলার চওড়াবড়গাছা ইউনিয়নের সুমনা রহমানকে। এ সময় ওই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ঠেলে দুই সন্তানকে নিয়ে পোশাক কিনেছেন।

সুমনা রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে মন চাইছিল না; কিন্তু সামনে ঈদ চলে আসায় সেই ভয়কে উপেক্ষা করেই মার্কেটে আসতে হচ্ছে। আমরা বড়রা বুঝলেও ছোটরা বুঝতে চাইছে না। তাদের আবদার পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে কেনাকাটা করতে হচ্ছে ভিড়ের মধ্যে।” 

জেলা শহরের বড়মসজিদ সড়কে সততা ক্লোথ স্টোরের ভেতরে টুলে বসে কাপড় কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। সেখানেও বসার ক্ষেত্রে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। একে অপরের শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে একই সঙ্গে কেনাকাটা করছেন অনেক ব্যক্তি। ওই দোকানে কথা হয় ঝর্না আক্তারের (৩০) সঙ্গে।

তিনি বলেন, “দোকানে প্রবেশের আগেই দোকাদার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করিয়েছেন। শরীরে জীবানুনাশক স্প্রে করে দিয়েছেন। এতে কিছুটা উপকার হলেও দোকানের ভেতরে ভিড় থাকায় কেনাকাটায় ঝুঁকি হচ্ছে।”

সততা ক্লোথ স্টোরের মালিক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের ভিড় অনেক বেশি। এরপরও দোকানে ক্রেতাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতারা সেটা মানতেই চাইছে না। এনিয়ে অনেক সময় ক্রেতাদের সাথে আমাদের বাক বিতণ্ডা হচ্ছে। অনেক ক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করছেন। তবে অধিকাংশই সেসব তোয়াক্কা করছেন না।”

জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের সুখধন গ্রামের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, “সকাল ১১টায় ছেলেকে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসেছি। ছেলের জন্য প্যান্ট-শার্ট কিনব বলে; কিন্তু করোনার ঝুঁকির মধ্যে ভিড় ঠেলে কোনো দোকানেই প্রবেশ করতে পারছি না। এখন ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষা করছি।”

জেলা শহরের কলেজ পাড়ার সাইফুল ইসলাম (৪০) বলেন, “নীলফামারী শহরের দোকানে দোকানে মানুষের ভিড় দেখে বুঝার উপায় নেই যে দেশে করোনার মহামারি চলছে।”

নীলফামারী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান বলেন, “প্রত্যেক দোকানের মালিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনে ক্রেতাদের জন্য হাত ধওয়ার ব্যবস্থা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। ক্রেতারা হাত ও শরীর জীবাণুমুক্ত করে দোকানে প্রবেশ করবেন। পাশাপাশি দোকানদারসহ কর্মচারীদের মুখে মাস্ক ও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিনা আকতার বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

“যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না আমরা তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করছি। আমাদের নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান রয়েছে। কোনো অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৬৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েচে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ জন।