আম্পান: আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছে মানুষ

গুমট গরম আর বৃষ্টি সুপার সাইক্লোন আম্পানের আগমন বার্তা জানান দিতে শুরু করেছে। উপকূলীয় জেলাগুলোয় নিম্নাঞ্চলের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া শুরু করেছে।

পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2020, 08:41 PM
Updated : 19 May 2020, 08:41 PM

আম্পান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিয়ে দুপুরের পর আঘাত হানতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উপকূলীয় সব জেলাতেই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থা।

তারই খবর দিয়েছেন আমাদের পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি প্রতিনিধি।

পিরোজপুর

পিরোজপুরে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বৃষ্টি ও সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়ার কারণে জেলার উপকূল অঞ্চল ও নদীর চরের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠছে বলে জানান পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোবাকেলায় ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য জেলায় ৫৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এ আশ্রয় কেন্দ্রে জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।

“মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই নদীর তীরবর্তী মানুষ ও চরাঞ্চলের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে  যথাযথভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির ও পয়ঃনিষ্কাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াদের শুকনো খাবার ও রাতে রান্না করা খাবর দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নদী তীরবর্তী এলাকা ও চর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়াও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রে আসা সকলকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ আঘাত হানার পরপরই জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ৬০টি মেডিকেল টিম এবং জেলা ও ৭ উপজেলায় ৮টি ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম খান জানান, সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ মোকাবেলায় জেলার প্রতিটি থানার ওসিকে স্থানীয়দের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নেওয়াদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালী

সুপার সাইক্লোন আম্পান ধেয়ে আসায় এ জেলায় মানুষে মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখতে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে নেওয়া শুরু হয়।

নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালীর উপকূলে অবস্থানরত মাছধরার ট্রলারসহ সব নৌযানকে নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি বৈঠক করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন দুর্গত এলাকার মানুষসহ সবার জন্য জেলায় সাইক্লোন শেল্টারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মোট ৭৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দুর্তগতদের জন্য ২শ মেট্রিকটন চাল, নগদ তিন লাখ টাকা, শিশু খাদ্যর জন্য দুই লাখ টাকা, গো খাদ্যর জন্য দুই লাখ টাকা এবং শুকনা তিন হাজার প্যাকেট খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।

এদিকে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ও দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সচেতন করতে মাইকিং করে জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব মেনে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।

এছাড়াও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে লাল পতাকা উড়িয়ে বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাট বাজারেও লাল পতাকা উড়িয়ে বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে।

ঝালকাঠি

ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর জেলে পাড়ার বাসিন্দারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় পর থেকে পাশ্ববর্তী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয়ণ নেয়।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৫টি কক্ষে ৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সুগন্ধা নদী পাড়ে এ এলাকায় বিভিন্ন পেশার তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করে। সেখানকার আরও অনেক পরিবার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

রাত ১০টার পর থেকে জেলায় বিভিন্ন স্থানের মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে উঠতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে।

এ জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে।

এদিকে জেলায় রাত ১০টা থেকে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়।