এই মামা-ভাগনে জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী বাগবাড়ি এলাকায় নূর হোসেনের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকেন। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের বাসায় তুলে দেয়।
ওই মামা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি সিটি গ্রুপে চাকরি করেন। তিনি তার ভাগনেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানোর জন্য এনেছিলেন। এমন সময় কোভিড-১৯ মহামারীতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দিন আগে ভাগনের জ্বর হলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ভাগনের পজেটিভ আসে।
মামা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ভাগনেকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী ভাগনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আইসোলেশনে ছিল। তারা এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন।
“বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িরওয়ালা ও এলাকার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আসেন। আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। আমরা যেতে না চাইলে তারা আমাদের মারধর করেন। একপর্যায়ে আমাকে ও ভাগনেকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। কিন্তু আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।”
পরে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে ফোন করলে প্রশাসন এগিয়ে আসে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, “এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি চান না ওই এলাকায় কোনো কোভিড-১৯ রোগী থাকুক। তিনি তাদের হাসপাতালে রাখতে চান। তিনি সেটাই করতে চেয়েছিলেন। পরে পুলিশ ও ডাক্তার পাঠিয়ে ওই রোগীকে তার বাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“তবে মারধর করা হয়নি। বাড়িওয়ালা বের করে দিয়েছিলেন। আমরা তাদের বলেছি ওই রোগী ওই বাড়িতেই থাকবে।”
আর কেউ যেন কোনো ঝামেলা না করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
বাড়ির মালিক নূর হোসেন মামা-ভাগনেকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই রোগীর কারণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে আমাদের এলাকায় কেউ আক্রান্ত হয়নি। আমরা ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে থাকি। ওই রোগীর কারণে আমাদের বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সাথে এলাকার লোকজন মেলামেশা করছে না।
“তাই তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এলাকার এমপি সাহেব একটি সিটও খালি করেছিলেন। হাসপাতাল থেকে লোকজন এসে ওই রোগীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রাতে তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেও পুলিশ এসে আবার তাদের বাড়িতে তুলে দিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “তাদের মারধর করা হয়নি। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় রাতে এলাকার ৫০-৬০ জন লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল।”
জেলায় পাঁচ শতাধিক কোভিড-১৯ রোগী নিজ বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।