তবে সরকারি নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদের কারো নামে এমন কার্ড ইস্যু করার কোনো বিধান নাই।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৪ নম্বর মরিচা ইউনিয়নের এমন বেশ কিছু তথ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
এ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাসির উদ্দীন তার স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকট আত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও এমএসএর কার্ড করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “এসব কার্ড যখন আসে তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দেন।”
এ মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানার নামেই রয়েছে এমন কার্ড।
২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ইস্যুকৃত ৬ নম্বর ভিজিডি কার্ডের অনুকূলে দেওয়া মাসিক ৩০ কেজি চাল তুলে আসছেন স্বীকার করে শারমিন সুলতানা বলেন, “নিয়ম না থাকলেও আমার উপর চেয়ারম্যান সাহেবের একটু নেক নজর আছে-তাই কোনো সমস্যা হয় না।
“কিছু মেম্বার আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।”
আবার তার বিরুদ্ধে অন্যের নামে ইস্যু করা কার্ডও নিজের কাছে রেখে দুস্থদের বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে।
“কয়েকদিন আগে এলাকায় খাদ্য সহায়তা দিতে আর্মির লোক এসেছিল। তাই দেখে ভয়ে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা আমার বাড়িতে এসে কার্ডটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু ওই কার্ডে তিন বছর ধরে টিপ সই দিয়ে চাল তুলে খাইছে। আমি ওই কার্ড নিতে চাইনি তবুও শারমিন মেম্বার জোর করে বাড়িতে কার্ড রেখে যায়।”
২ নম্বর ওয়ার্ড ভুরাপাড়া গ্রামের জিয়ারুলের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তার নামে ইস্যুকৃত ৪ নম্বর ভিজিডি কার্ড হলেও ‘তা হাতে পাননি।’ তবে তার নামের কার্ড থেকে গত ১৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে।
“দুই বছর আগে মহিলা মেম্বার শারমিন সুলতানা ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলেন। এ কার্ডের জন্য বহুদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরলেও কাজ হয়নি।
“ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর বলেন, আমার নামে কোনো কার্ড হয়নি।”
নিয়ম ভেঙে ইউপি সদস্যদের নামে কার্ড করার ব্যাপারে চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর বলেন, “ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডির কার্ড করা যাবে কি-না সেটা আমার জানা ছিল না। অনেক মেম্বারই না বুঝে এমনটি করেছে।
“তাছাড়া নিয়ম না থাকলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব কার্ড অনুমোদন দিলেন কীভাবে?” এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন এই চেয়ারম্যান।
“এভাবে দেখলে আমার ইউনিয়নের প্রায় সব সদস্যই কোনো না কোনোভাবে সরকারি এসব নানা সুবিধা নিচ্ছেন।”
সুবিধা কম-বেশি হওয়ার কারণে একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দৌলতপুর উপজেলা খাদ্য সহায়তা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার পরামর্শ দিয়ে ‘কোনো অনিয়মের প্রমাণ’ পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এদিকে, দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারী তার নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার নিয়ম নেই।
“অস্বচ্ছল হলেও এটি আইনসম্মত নয়।”
এমন নিয়ম বহির্ভূত কিছু হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনিও আশ্বস্ত করেন।
এদিকে, ওই ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্যর দাবি, এখানে যা কিছুই হোক না কেন ‘ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসেই হয়।’
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সব সদস্যই নিজের বা পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ওএমএস ও ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে সরকারি চাল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে দাবি তাদের।