পেট বাঁচাতে পথে নেমে ধরা পরিবহন ও পোশাক শ্রমিকরা

অবরুদ্ধ দেশে গাইবান্ধা থেকে রাতের আঁধারে বিপাকে পড়া পরিবহন শ্রমিকরা পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে যাত্রা করে ধরা পড়েছেন।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2020, 02:18 PM
Updated : 2 May 2020, 02:18 PM

গাইবান্ধার পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় নেওয়ার পথে এমন ২০টি বাস ও চারটি মাইক্রোবাস আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি আই অ্যাডমিন) নুর আলম সিদ্দিক। এ বাসগুলোয় পাঁচশ’ বেশি পোশাক শ্রমিক ঢাকা যাচ্ছিলেন।

এসব বাসের মধ্যে রয়েছে ফাতেমা পরিবহন, সূর্য্য পরিবহন, আজাদ পরিবহন, নিউ সাফা, আনন্দ পরিবহন, অভি পরিবহনসহ বেশকিছু পরিবহন।

তিনি জানান, যাত্রীদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন পরিবহন আইনে এসব গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সাড়ে তিন শতাধিক পোশাক শ্রমিক যাত্রী নিয়ে ছয়টি নৈশবাস এবং গাইবান্ধায় দেড়শ’ পোশাক শ্রমিকসহ তিনটি নৈশবাস আটক করে পুলিশ।

সাদুল্লাপুর থানার ওসি মাসুদ রানা জানান, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হাসানগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা থেকে সাড়ে তিন শতাধিক পোশাক শ্রমিক নিয়ে ছয়টি নৈশকোচ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা ঘাঘট সেতুতে বাস ছয়টি আটক করা হয়।

তিনি আরও জানান, রাতেই যাত্রীদের বাড়ি পাঠানো হলেও বাস ছয়টি আটক করে নতুন পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে।

গাইবান্ধা সদর থানার ওসি খাঁন মোহাম্মদ শাহারিয়া জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে কোনো অনুমতি ছাড়াই তিনটি ঢাকাগামী নাইটকোচ ১৫০ জন পোশাক শ্রমিককে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।  শহরের নতুন সেতু এলাকা থেকে বাসসহ যাত্রীদের আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও জানান, রাতেই ওই যাত্রীদেরকে বাড়ি পাঠানো হয়। তবে ওই বাস তিনটি আটক করে থানায় মামলা করা হয়।

চৌধুরাণী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া শ্রীপুরের ডিবিএল গার্মেন্টসের শ্রমিক বাবলু মিয়া জানান, শনিবার তাদের কারখানায় যোগ দিতে বলা হয়েছে। না হলে ছাঁটাই করা হতে পারে।

“এ সময় চাকরি গেলে ঈদের আগে পরিবার নিয়ে মহাবিপাকে পড়তে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ৫০০ টাকার জায়গায় দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম।”

হাসানগঞ্জ থেকে সাভারের উদ্দেশে রওনা হওয়া নুর মোহাম্মদ সাভারের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

তিনি বলেন, “চাকরিটা চলে গেলে খাব কী?

“করোনা মহামারী শেষে নতুন করে আবারও চাকরি পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরার চেয়ে মাথায় আর কোনো ভোগান্তির কথা এ সময় আসে না।”

বামনডাঙ্গা থেকে গাজীপুরে উদ্দেশে আযাদ পরিবহনে রওনা হওয়া সোহাগী বেগম জানান, কাজে যোগ না দিলে বেতন-ভাতা দেবে না। 

“তাই হাজারো দুর্ভোগ সহ্য করে ৩০০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাতা দিয়ে এ বাসে রওনা হয়েছিলাম।”

গাইবান্ধার এক শ্রমিক নেতা বলেন, “দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি।

“সংসার তো আর চলছে না। ”

এ কারণে  সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ‘বিভিন্ন স্থানে ম্যানেজ করে’ কিছু বাস যাত্রী পরিবহন করে বলে জানান তিনি।

এছাড়া এভাবে বাসসহ যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর।