নেতাদেরই ত্রাণ দিলেন মাগুরার এক এমপি, পরে ফেরত

মাগুরায় দুস্থ অসহায় মানুষের বদলে ত্রাণ কমিটির লোকজনকে ত্রাণ দিয়েছেন স্থানীয় এক সংসদ সদস্য।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2020, 01:14 PM
Updated : 30 April 2020, 04:11 AM

মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার গত মঙ্গলবার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গঠিত ত্রাণ কমিটির সদস্যদের মধ্যে এ ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করেন।

বিনোদপুর ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড ত্রাণ বিতরণ কমিটিতে যুক্ত ফারুক হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার বীরেন শিকদার উপস্থিত থেকে আমাদের ত্রাণ বিতরণ ওয়ার্ড কমিটির প্রত্যেককে এক প্যাকেট করে খাদ্য সামগ্রী দেন।

“দুস্থ মানুষের বদলে আমাদেরকে ত্রাণ দেওয়ায় বিব্রত হয়েছি বটে, তবে এমপি নিজে হাতে দেওয়ায় তার সম্মানে আমি এটি গ্রহণ করেছি।

“অবশ্য এ সময় এ ইউনিয়নের  ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রাণ বিতরণ কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রত হয়ে ত্রাণ ফেরত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য ওয়ার্ডের অনেকেই ত্রাণ ফেরত দিয়ে যান।”

বিনোদপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির ১৫ সদস্যকে উপস্থিত হতে বলা হয়।

“আমরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে এমপি বীরেন শিকদার আমাদেরকে একটি করে ত্রাণের প্যাকেট দেন। এতে আমরা বিব্রত হই। পাশাপাশি ১ নম্বর, ২ নম্বর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫ সদস্যের ত্রাণ কমিটির প্রত্যেকেই ফেরত দিই।

“একই সাথে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুস্থ অসহায়দের বদলে আমাদের ত্রাণ কমিটির নেতাদের কেন ত্রাণ দেওয়ার জন্যে মনোনিত করা হল এ রকম প্রশ্ন তুলি। এ সময় এমপি বিষয়টি বুঝতে পেরে নিজেই বিব্রত হন। পরে ওই ত্রাণ অন্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।”

তবে বিনোদপুর ত্রাণ কমিটি আহ্বায়ক একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১৫ জনের একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে প্রত্যেককে একটি করে প্যাকেট দিয়ে তাদের পছন্দ অনুযায়ী এলাকার যেকোনো ব্যক্তিকে দিতে বলা হয়। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি ভুল বুঝে তা ফেরত দেন। পরে এগুলো বিভিন্ন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।”

আবার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, “এটি এমপির ব্যক্তিগত সহযোগিতা। যা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেই দেবার কথা ছিল। সেটাই দেওয়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে এমপি বীরেন শিকদার বলেন, “ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে ত্রাণগুলো প্রকৃত দুস্থদের মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ত্রাণ কমিটির লোকজন এটি তাদের দেওয়া হচ্ছে মনে করায় এটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে এগুলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে রেখে প্রকৃত দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।”

বিতরণকৃত এসব ত্রাণের ১৪৫ প্যাকেটের প্রত্যেকটিতে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, আধা কেজি লবণ ও ছোট একটি সাবান বলে জানান স্থানীয় নেতারা।

সম্প্রতি সরকারের ত্রাণের চাল দুস্থদের মাঝে বিতরণের বদলে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের তা আত্মসাতে জড়িত হতে দেখা যায়। এসব ঘটনায় অনেককে সাজাও দেওয়া হয়েছে। এমন কি দল থেকে বহিষ্কার করার নজিরও রয়েছে।