করোনাভাইরাস সংকটেও থেমে নেই পাহাড়ের খুনোখুনি

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মানুষ যখন বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছে সেই সময়েও পাহাড়ের জেলাগুলোতে ঘটে চলেছে হত্যার পর হত্যা। গত একমাসে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন প্রতিপক্ষের হামলায়।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2020, 01:03 PM
Updated : 29 April 2020, 03:59 PM

২৫ মার্চ রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির ভূষণ চাকমা দুদোরবু নিহত হন। এরপর ২ এপ্রিল ও ১১ এপ্রিল এই জেলায় আরও দুইজন নিহত হন। সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে নিহত হয়েছেন দুই জন।

প্রতিটি হত্যার জন্য সশ্লিষ্ট সংগঠন প্রতিপক্ষের উপর দোষারোপ করেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের খবর জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন সক্রিয় আছে। এগুলো হলো সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) এবং জালোয়া চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (গণতান্ত্রিক)।

গত ২৫ মার্চ রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির ভূষণ চাকমা দুদোরবুকে (৪০) গুলি করে হত্যা করা হয়।

উপজেলার রূপকারি ইউনিয়নে নিজ বাসায় একদল সশস্ত্র লোক তার উপর হামলা চালায়। এই সময় তার স্ত্রীও আহত হন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ওই সময় জানিয়েছিলেন, নিহত ভূষণ তাদের সমর্থক এবং তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষ একটি সংগঠন তাকে হত্যা করেছে।

এই হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর ২ এপ্রিল রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় যুবলীগ নেতা উসুই প্রু মারমা আচোসকে (৩০) গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।

কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি।

কাপ্তাই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ানম্যান নাসিরউদ্দিন এই হত্যাডেকাণ্ন্ডের জন্য পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছেন।

এরপর ১১ এপ্রিল রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হেমন্ত চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ এই হত্যার জন্যও আঞ্চলিক দলগুলোর বিরোধকেই দায়ী করেছে।

রাঙামাটির এই তিন হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার (২৮ এপ্রিল) খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরা হলেন মধ্যবানছড়ার বীরেন্দ্র মোহন চাকমার ছেলে সুদীব্য চাকমা (৩৫) এবং নন্দেশ্বর কার্বারী পাড়ার সুশীল চাকমার ছেলে এঞ্জেল চাকমা ওরফে বাবু (৩৭)।

ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিপক্ষ একটি সংগঠনকে দায়ী করেছেন।

গতম ২৫ এপ্রিল রাঙামাটিতে সরকারি ত্রাণ সমন্বয়ে সচিবদের নেতৃত্বে গঠিত সমন্বয় কমিটির প্রথম সভায় রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।

ওই সভায় তিনি বলেন, “পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য খুনের মত জঘন্য অপরাধ করেই চলেছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। আঞ্চলিক দলের দ্বন্দ্ব ছাড়া জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো আছে।”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য চিংকিউ রোয়াজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। সারাবিশ্বের মানুষ যখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বসে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে, লড়াই করছে কীভাবে এই ভয়ংকর ভাইরাসকে মোকাবেলা করবে, সেই সময় এইসব নির্মম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড খুবই হতাশাজনক।”