গোপালগঞ্জে ধান তুলতে ‘চাষির হাসি সেল’, নিবন্ধন ৫শ শ্রমিকের

কৃষকের ধান কেটে দিতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ‘চাষির হাসি সেল’ খোলার একদিনের মধ্যেই নিবন্ধন করেছেন পাঁচশ কৃষি শ্রমিক।

গোপালগঞ্জে প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2020, 11:49 AM
Updated : 28 April 2020, 11:49 AM

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান  ‘চাষির হাসি সেল’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলেছেন। সোমবার ইউএনও নিজ কার্যালয়ে এ সেলের উদ্বোধন করেন। 

মঙ্গলবার এ সেলে পাঁচশ কৃষক ও শ্রমিক রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজার রহমান জানান।

ইউএনও বলেন, কর্মক্ষম বেকার, বিভিন্ন পেশার কর্মহীন ব্যক্তি, পরিবহন শ্রমিক, বন্ধ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, কর্মচারী , নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য, ছাত্র, যুবকসহ সর্বসাধারণ মানুষকে এ কাজে আহবান করা হয়েছে। তারা নিজ প্রয়োজন, দায়িত্ববোধের তাড়নায় শ্রমিক হিসেবে বা স্বেচ্ছাশ্রমে ধান সংগ্রহ করে কৃষকদের সহযোগিতা করতে চান তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

“প্রত্যেক ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে আগ্রহী ব্যক্তি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন; ‘চাষির হাসি সেল’ ফেইসবুক পেজ থেকেও রেজিস্ট্রেশন ফরম সংগ্রহ করা যাবে।” 

ইউএনও আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত শ্রমজীবী মানুষ এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মক্ষম যুবসমাজের একটি বড় অংশ বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেরই বর্তমানে কোনো আয়-রোজগার নেই। জমানো টাকাও শেষ হবার পথে। ভবিষ্যৎ চিন্তায় তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

“এমন কর্মহীনদের মধ্যে কারো কারো হয়ত আর্থিক দৈন্যতা নেই; তবে জাতির এ দুঃসময়ে মানুষের জন্য কিছু করার তীব্র বাসনা ও মানসিকতা রয়েছে। তাই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”

তিনি কেয়েকটি মোবাইল নম্বর, ফেসবুক পেজ অথবা সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন কোটালীপাড়ার বোরো চাষিদের। চাষির হাসি সেল নম্বরগুলো হলো- ০১৭৩৪৭০৫০৯৯, ০১৭৪৫৩৮৭১৩৫, ০১৯১৮৬৮৩২৬৫। এছাড়া ফেসবুক পেজ- চাষির হাসি সেল অথবা সরাসরি কক্ষ- ৩১২, উপজেলা পরিষদ ভবন, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জে যোগাযোগ করা যাবে বলে তিনি জানান।

কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ গ্রামের কৃষক ইউনুছ শেখ বলেন,  বোরো ধান পেকেছে। কিছু কিছু কাটা হয়েছে। সাত দিন পর পুরোদমে ধানকাটা শুরু হবে।

“ধান কাটা নিয়ে আমরা এখন  দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক এই এলাকায় ধান  কাটার কাজে আসত। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকরা আসছে না। এ পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে আমাদের সঙ্গে কাস্তে হাতে এগিয়ে এসেছেন। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা অপ্রতুল। এখন ধান ঘরে তুলতে চরম অনিশ্চয়তায় মধ্যে রয়েছি।”

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিতুল রায় বলেন, এ বছর কোটালীপাড়ায় ২৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এ উপজেলার ধান সবেমাত্র পাকা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সাতদিন পর পুরোদমে ধান কাটা পড়বে।

“আমরা ইতিমধ্যে ধান কাটার মেশিন বিতরণ করেছি। কৃষককে ধান পাকামাত্র কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি সব ধরনের টেকিনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছি। এরমধ্যে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।”

তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ সংকট মোকাবেলায় ও কৃষককে রক্ষায় ‘চাষির হাসি সেল’ নামে একটি সেল চালু করেছেন। প্রথম দিনে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাঁচশ কৃষক ও শ্রমিক রেজিস্ট্রেশন করেছেন।