অধর্শত চিকিৎসক আক্রান্তে কিশোরগঞ্জে নড়বড়ে স্বাস্থ্যসেবা

প্রায় অর্ধশত চিকিৎসকসহ ব্যাপক সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2020, 07:48 PM
Updated : 26 April 2020, 07:48 PM

রোববার এ জেলায় আরো একজন চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন; এ নিয়ে জেলায় ৪৮ জন চিকিৎসকের এ রোগ শনাক্ত হল। চিকিৎসক ছাড়া বিভিন্ন ধরণের ৬২ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জে  করোনাভাইরাস ১৭৬ জন আক্রান্তের মধ্যে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীই ১১০ জন।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, ব্যাপকহারে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়াতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

“গত ১৪ এপ্রিল করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। আরো চার-পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম অচল হওয়ার উপক্রম।এসব হাসপাতালে কোনো মতে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে, জেলার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৪৮ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ৬২ জন।

এরমধ্যে তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের বাইরে দুইজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাতজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ  সদর ও হোসেনপুরে একজন করে মোট তিনজন আক্রান্ত মারা গেছে।

সাবেক সিভিল সার্জন ও সিনিয়র চিকিৎসক ডা. আতিকুল সারোয়ার বলেন, “করোনা মোকাবেলায় সম্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এত ব্যাপকহারে আক্রান্ত হওয়া খুবই উদ্বেগজনক।

“বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে গভীরভাবে তলিয়ে দেখে সরকারের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” 

জেলা বিএমএ-র সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ ওয়াহাব বাদল জানান, অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।

“প্রধানত যথাযথ মানসম্মত পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব, চিকিৎসকের কাছে রোগীর তথ্য গোপন করা ও অনেক রোগীর প্রকাশ্য উপসর্গ না থাকার কারণেই তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।”

জেলা বিএমএ’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. খালেকুল ইসলাম ববি জানান, সন্দেহভাজন চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা সংগ্রহের পর ঢাকা থেকে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কাজে বহাল রাখার কারণে সহকর্মীসহ অন্যান্যরা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “প্রায় ১৫ দিন ধরে হাসপাতাল লকডাউনের কারণে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় এ এলাকার সাধারণ মানুষ খুবই ভোগান্তির মধ্যে আছেন।

“আমি নিজেই আজ খুব হয়রান হয়েছি। এ অবস্থায় রোগীদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও এখন নাই।”

তাড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে এখন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিতে এসেও ফেরত যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছে।”  

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্যে- তাড়াইল উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসকসহ ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ভৈরব উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮ জন চিকিৎসকসহ ২২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, কটিয়াদী উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮ জন চিকিৎসকসহ ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও মিঠামইন উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জন চিকিৎসকসহ ১৯ জন স্বাস্থ্য কর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।

এছাড়া করিমগঞ্জ উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসকসহ মোট ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ইটনা উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪ জন চিকিৎসকসহ ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী, বাজিতপুরের ২ জন চিকিৎসকসহ ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও নিকলী উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ জন চিকিৎসকসহ ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন।

কুলিয়ারচর উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ জন চিকিৎসক এবং পাকুন্দিয়া উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৫ চিকিৎসক ও ১ জন বেসরকারি চিকিৎসকসহ ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিভিন্ন উপজেলায় আক্রান্ত চিকিৎসক ছাড়াও আরো অন্তত ২০ জন চিকিৎসককে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া এসব হাসপাতালে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন নার্স, মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট, প্যাথলজিস্ট, টেকনোলজিস্ট, ব্রাদার সহ অন্যান্যরা।

সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া সর্বশেষ উপজেলাওয়ারী হিসাবে সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ১৫ জন, ভৈরব উপজেলায় ৪৩ জন, মিঠামইন উপজেলায় ২৪ জন, তাড়াইল উপজেলায় ২৪ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ১৬ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ১২ জন, ইটনা উপজেলায় ১১ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ১০ জন, বাজিতপুর উপজেলায় ৬ জন, নিকলী উপজেলায় ৫ জন, পাকুন্দিয়ায় উপজেলায় ৪ জন, হোসেনপুর উপজেলার ৩ জন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।