এদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসক ও ১৫ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক। বাকিদের মধ্যে ১২ জন নার্স ও নয়জন সহায়ক পরিছন্নকর্মী। এদের মধ্যে ছয় চিকিৎসককে পর্যটনের মোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে এবং বাকিরা প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, “যাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে তারা জরুরি বিভাগ, রেডিয়োলজি বিভাগ, ৪২ ও ৩৯ নং ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন।
“আগামী দুই দিনের মধ্যে সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।”
তিনি জানান, মঙ্গলবার দিনভর তাদের চিহ্নিত করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও লকডাউন করা হয়েছে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া না পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডের কোন রোগী প্রবেশ ও বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাইফুল ফেরদৌস বলেন, “রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৮০ বছর বয়সের ওই রোগী গত ১৭ এপ্রিল এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
“প্রথমে তাকে ৪২ এবং পরে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। পর দিন তার এক্স-রে করার পর লক্ষণ পাওয়ায় তাকে সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।”
হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে হাসপাতালের গেটে চিকিৎসকদের ব্রিফিং বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সকালে হাসপাতালের গেটে করোনাভাইরাসের রাজশাহীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা ব্রিফিং করতেন। বুধবার থেকে আর ব্রিফিং করা হবে না। তবে সেটি অনলাইনে করার পরিকল্পনা চলছে বলেও জানিয়েছেন করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসক টিমের প্রধান ডা. আজিজুল হক আজাদ।
মঙ্গলবার সকালে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ডা. আজাদ জানান, সংক্রমক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বয়স ৮০ বছর। তিনি জ্বর ও প্রস্রাবের সমস্যার কথা বলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেভাবেই তার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
“তাকে বুঝতে আমাদের একটি দেরি হয়ে যায়। কারণ তিনি বলেননি-বাইরে থেকে আসা কারও সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। তবে তার এক্সে করার পর করোনার উপসর্গ কিছুটা বোঝা যায়। এরপর তাকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।”
ডা. আজাদ জানান, এই রোগী এখন পর্যন্ত ভালো আছেন। সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে তার স্ত্রী ও ছেলে রয়েছেন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়াও সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে আরও যে নয়জন ভর্তি রয়েছেন তারা সুস্থ্য আছেন। তাদের নমুনায় করোনা পাওয়া যায়নি। তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে আক্রান্ত অপর সাত রোগী ভালো রয়েছেন। সবার চিকিৎসা চলছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
১৪ দিন পার হওয়ার পর প্রত্যেকের দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিং অন্যদের মধ্যে রাজশাহী সদর আসেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার পরীক্ষার পর রাজশাহীতে আরও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন মহিলা ও একজন পুরুষ। এ নিয়ে রাজশাহীতে করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটজনে।
রাজশাহী জেলার আটজনের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচজন, বাঘায় একজন, বাগমারায় একজন ও মোহনপুরে একজন আক্রান্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন।