দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল হয়ে আসা ভারত ফেরতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিনে রাখা ও তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
তাছাড়া উপজেলায় বেকার হয়ে পড়া লোকজনকে ত্রাণ দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদেরই।
এসব করতে গিয়ে তারা নিজেরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তেমনি তাদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। তাদেরই কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলক কুমার মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝুঁকি থাকা সত্বেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি।
পরিবার-পরিজন সম্পর্কে তিনি বলেন, “ঝুঁকির কারণে এক মাস হল পরিবার থেকে দূরে আছি। পরিবারের সদস্যরা যশোর শহরে থাকেন। তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। তবে কথা হয়। পরিবার থেকে বারবার সতর্ক করছে। আমিও তাই সতর্ক থেকে কাজ করছি। তবে অনেকেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকেন। এটা একটা চিন্তার বিষয়।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী ফেইসবুকে লিখেছেন তার কাজের অভিজ্ঞতা ও পরিবার-পরিজন নিয়ে অনুভূতির কথা।
“সত্যিই এখন আমার ভয় করে বাইরে যেতে, ডিউটির পর বাসায় ফিরতে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হব, এই পেশার প্রতি খুব শ্রদ্ধা ও ফ্যাসিনেশন ছিল। নিজেকে এই পেশায় বিলিয়ে দিতে কখনও পিছপা হব না। নিজের ছোট ছেলে ও পরিবারকে বাসায় রেখেও প্রতিদিন করোনা বিস্তার প্রতিরোধ, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরা, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরা, মোবাইল কোর্ট, বাজার মনিটরিং, মানুষকে নিজ ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য ছুটে চলছি উপজেলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আমার নিজের খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে ডিউটিতে যাই সমস্যা নেই, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন, মানুষকে বুঝিয়ে, অনুরোধ করে, জরিমানা করেও ঘরে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। এখন আমি আমার পরিবারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমার মাধ্যমে যদি ভাইরাস বাসায় নিয়ে যাই তো আমার ছেলের ও পরিবারের কী হবে? তবুও আমি ডিউটি করছি। পালাইনি। পালাবও না। ভয় করে ছেলেকে চুমু দিতে, কোলে নিতে। নিজের নিঃশ্বাসকেই বিষাক্ত মনে হয়। তার মধ্যে পিপিই পরে বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করাও বিশাল এক যন্ত্রণা! মাস্ক পরে দম কেমন বন্ধ হয়ে আসে। প্রতিটি ডিউটিই এমন মানসিক আর শারীরিক কষ্টে ভরা।”
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, “ভারত থেকে ফেরা প্রত্যেক যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিনা, করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা, সেসব দেখার দায়িত্ব আমাদের।
“এই যাত্রীদের বাসায় নাকি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা উচিত, নাকি হাসপাতালে পাঠাতে হবে এসব নির্ণয় করতে হয়। এখানে ঝুঁকি তো থাকবেই। তার পরও সেবার মানসিকতা নিয়ে চাকরিতে এসেছি। সরকার সুরক্ষার জন্য হ্যান্ডগ্লাভস, মাক্স ও পিপিই দিয়েছে। এর পরও অজানা এক আতঙ্ক মনে কাজ করে। তাই আপাতত পরিবার থেকে দূরে থাকছি।”
ভারতফেরতদের মধ্যে যাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার দরকার তাদের রাখা হচ্ছে ‘বেনাপোল পৌরবিয়েবাড়িতে’। সেখানে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আব্দুল মান্নান দায়িত্ব পালন করছেন।
মান্নান বলেন, “তিন শিফটে তিনজন করে আমরা এখানে দায়িত্ব পালন করি। সতর্কতার সঙ্গে কাজ করি। তবু ঝুঁকি তো রয়েছেই। দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় যাই। সেখানে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকি। সাবধানে থাকার চেষ্টা করি।”