নিজে আক্রান্ত শুনে চিকিৎসকের উদ্বেগ- ‘কী হবে রোগীর…’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর সেবা দিতে দিতেই চিকিৎসক জানতে পারলেন তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2020, 09:00 PM
Updated : 14 April 2020, 10:49 AM

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ চিকিৎসককে পাঠানো হবে ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কোনো হাসপাতালে।

তিনি তার ঊর্ধ্বতনকে বললেন, “আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি কে করবে, কী হবে রোগী যদি আসে?’

তার সহকর্মী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েমুল হুদা ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘ইচ্ছে করছিল অনেক আওয়াজ করে ছোট শিশুদের মত কান্না করতে…’

পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিতে অকুতোভয় এই চিকিৎসকের পুরো কাহিনী ফেইসবুকে ওই পোস্টে বর্ণনা করেছেন ডা. হুদা।

তিনি লিখেছেন, তারা চিকিৎসকসহ ১০ জনের নমুনা পাঠিয়েছিলেন, তারমধ্যে নয়জনের করোনাভাইরাস নেগেটিভ, আর একজন চিকিৎসকের পজিটিভ এসেছে।

“সাভারে ৪১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৪০ জন নেগেটিভ। কী ভাগ্য আমাদের!!!’

“আমি আমার যোদ্ধাদের মনোবল দেখে বিস্মিত!

“তাকে বললাম, ‘আপনাকে তো কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

“তিনি তখনও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

“তিনি বললেন, ‘স্যার আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি কে করবে, কী হবে রোগী যদি আসে?’

“চুপ হয়ে গেলাম। ইচ্ছে করছিল অনেক আওয়াজ করে ছোট শিশুদের মত কান্না করতে কিন্তু পারিনি।

“কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘আমি করব ইমারজেন্সি ডিউটি। আপনি চিন্তা করবেন না।’ আমার সিভিল সার্জন স্যার সাহস দিলেন। আমার যোদ্ধা এখন ভর্তি আছে।”

সায়েমুল হুদা লিখেছেন, “আমাকে বলে, ‘স্যার আপনি আইসোলেশনে চলে যান, কারণ আজ সারাক্ষণ আমরা একসাথে ছিলাম।’ একসাথে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলাম। আজ আমি চলে আসলাম আইসোলেশনে। আমিসহ আমার ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আইসোলেশন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

“বলেছি সহকর্মীদের, যদি বাঁচতে হয়, একসাথে লড়ে বীরের মত বাঁচব, আর মরতে হলেও বীরের মত মরব।

“এত মানুষ আমাদের ভালবাসে, নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেখে রাখবেন। আমাদের সেবা কার্যক্রম যথারীতি চলবে। যদি আমি ও আমার টিম বেঁচে থাকি দেখা হবে নিশ্চয়।”

সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, গত কয়েক দিন ধরে ওই চিকিৎসকসহ কয়েকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস উপসর্গ থাকায় পরীক্ষার জন্য নমুনা মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইপিএইচ) পাঠানো হলে রাতে জানানো হয় ওই চিকিৎসকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই তাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওই চিকিৎসক সারা দিন রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি রাজধানীর শ্যামলীতে থাকেন। সেখান থেকেই সাভার হাসপাতালে এসে দায়িত্ব পালন করতেন।”

এ ঘটনার পরবর্তী সিদ্ধান্ত সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসক নেবেন বলেন তিনি।