মুরগির ‘বাচ্চা ১ টাকায়, তাও বাকি’

মুরগি আর ডিমের দাম কমে গেলেও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু মুরগির বাচ্চা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের হ্যাচারি মালিকরা।

মোমেন মুনি জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2020, 07:24 AM
Updated : 12 April 2020, 08:02 AM

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার প্রায় সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে। এ অবস্থায় বেকারত্ব বেড়ে এবং আতঙ্কে মানুষের চাহিদা কমেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ডিম-মুরগি দূরে পাঠানো যাচ্ছে না, আবার খামারে নতুন বিনিয়োগেও অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপাতি আনোয়ারুল হক আনু বলেন, গত ২৬ মার্চের পর থেকে হঠাৎ করেই ডিম-মুরগির দাম পড়তে থাকে। দূরের বাজারে পাঠাতে না পারায় এই সমস্যা বেশি হয়েছে।

“প্রতিদিন লাখ লাখ মুরগি, ডিম ও বাচ্চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আমরা নিরুপায় হয়ে ১০ টাকার ডিম ৩ টাকায়, ১৪ টাকার বাচ্চা ১ টাকায় আর ১৮০ টাকার মুরগি ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। তাও বাকিতে! নামমাত্র দামে যাকে-তাকে বাকিতে কোনোমতে গছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে উৎপাদন খরচ ওঠা তো দূরের কথা, ব্যাংক ঋণের সুদের টাকাও ওঠানো যাচ্ছে না।”

এ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার মুরগির খামার রয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, তাছাড়া শ খানেক হ্যাচারি ও ১৬টি ফিডমিল রয়েছে। সব মিলিয়ে স্থায়ী ও চলতি মূলধন হিসাবে বিনিয়োগ রয়েছে কমপক্ষে  পাঁচ হাজার কোটি টাকার।

“এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ডিম-মুরগির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।”

পোল্ট্রি শিল্প বাঁচাতে ‘পর্যাপ্ত আর্থিক প্রণোদনা’, সুদ মওকুফ ও ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার দুপুরে জয়পুরহাট পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারুল এই দাবি জানান। এ সময় সেখানে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান, জয়পুরহাট পৌরমেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারুল লিখিত বক্তব্যে জানান, “দেশের মধ্যে জয়পুরহাট সোনালী পোল্ট্রি শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বর স্থান দখল করে আছে। দেশে বিভিন্ন জাতের মুরগির মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ হয় জয়পুরহাটে।

“জয়পুরহাটের খামারে বছরে প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার টন সোনালি মুরগির মাংস উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে পাঠানো হয়।”

তিনি বলেন, “জয়পুরহাটের খামারে বছরে ৪০ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ২৬ কোটি ডিম দিয়ে সোনালি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। অবশিষ্ট ১৪ কোটি হাইব্রিড ডিম খাওয়ার জন্য উৎপাদন করা হয়।

“ইতোমধ্যে জেলার অনেক মুরগির খামার, হ্যাচারি ও ফিডমিল বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলিও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অচিরেই বন্ধ হতে পারে। খামার, হ্যাচারি, ফিডমিল মালিক ও পরিবেশকরা নিজস্ব তহবিল, ব্যাংকঋণ ও বাকিতে পণ্য আদান-প্রদানের দেনা-পাওনা বাবদ শত শত কোটি টাকার দায় মাথায় নিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত অবস্থায় দিনাতিপাত  করছেন। আমরা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস মহামারীর চাইতে বড় মহামারীতে নিমজ্জিত হয়েছি।”