টিসিবি-র বিতরণ চিত্র: বগুড়ায় ২৪০ ডিলারের ১৮ জন পণ্য তুলেছে

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী রোধে দেশে প্রায় সব কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষরা ভিড় জমাচ্ছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সুলভ মূল্যের খাদ্য সামগ্রী কেনার জন্য।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2020, 11:07 PM
Updated : 9 April 2020, 02:15 AM

তবে এ প্রতিষ্ঠানের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে টিসিবি বগুড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জামাল উদ্দিনের কথায়। তিনি স্বীকার করেছেন- বুধবার পাঁচটি জেলার ২৪০ জন ডিলারের মধ্যে মাত্র ১৮ জন ডিলার মালামাল তুলেছেন।

এ ২৪০ জন বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা এ পাঁচ জেলার ডিলার।

টিসিবির বগুড়া ক্যাম্প অফিসের তথ্য মতে,  প্রতি ডিলারকে প্রতিদিন চিনি দেড় হাজার কেজি, মসুরের ডাল দেড় হাজার কেজি ও সয়াবিন তেল দুই হাজার লিটার বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

জামাল উদ্দিন জানান, পহেলা এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মালামাল সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়াও টিসিরির পণ্য বিতরণে আরো অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিলারদের মাধ্যমে পহেলা এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এসব সামগ্রী বিতরণ করার কথা। তবে বগুড়ার কোথায় কখন এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বগুড়া শহরে ক্রেতাদের মধ্যে।

তবে জামাল উদ্দিন জানান, বগুড়া শহরে তিনটি স্থানে টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। স্থানগুলো হচ্ছে-বনানী, কলোনী ও সাতমাথা। আর উপজেলায় কোথায় টিসিবি বিক্রি করবে তা ঠিক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

“পহেলা এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মালামাল দিতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা গুদাম থেকে মালামাল সরবরাহ করছি।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিনের মতো বুধবার সার্কিট হাউজের সামনে ৭/৮শ মানুষ সকাল থেকে লাইন ধরলেও দুপুর ১২টায় অনেকেই পণ্য দেবে না ভেবে চলে যায়। কিছু মানুষ তবুও অপেক্ষা করে। হঠাৎ তারা জানতে পারেন-সাতমাথায় টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে। তখন নারী-পুরুষ সবাই দৌড়ে সাতমাথার দিকে রওনা হয়।

বুধবার সাতমাথায় টিসিবির পণ্য আসে দুপুর ১টায়। টিসিবির বগুড়া অফিস থেকে শহরে আসতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগলেও মালামাল দিতে আসে কখনও দুপুর ১২টা, কখনও ১টা কখনও দুপুর ২টায়।

পণ্য সামগ্রী সকাল ৯টা থেকে সরবরাহের কথা থাকলেও কেন কখনো দুপুর ২টাও বেজে যাচ্ছে জানতে চাইলে বগুড়া ক্যাম্পের এ প্রধান জানান, ডিলাররা তাদের জানিয়েছে-‘ব্যাংকে টাকা জমা দিতে দেরি হয়, তাই টাকা জমার চালান নিয়ে আসতে দেরি হওয়ার কারণেই মালামাল নিতে দেরি হচ্ছে।’

জেলা শহরের পাশাপাশি ধুনট, শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়াসহ অন্যান্য উপজেলা সদরে এসব মালামাল বিক্রি করা হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখনও পৌছায়নি টিসিবির সেবা।

দুপচাঁচিয়ার গুনাহার, ধুনটের গোসাইবাড়ী, সারিয়াকান্দির কুতুবপুর ইউনিয়নের কয়েকজনের সাথে কথা হয়। বগুড়া শহরের ১৪ নং ওয়ার্ড, ৬নং ওয়ার্ডসহ আরো কয়েকটি ওয়ার্ডের লোকজনের সাথে কথা হলেও তারা তাদের এলাকায় টিসিবির পণ্যের কোনো গাড়ি যায়নি বলে অভিযোগ করেন।

বেশিরভাগ ডিলার পণ্য উত্তোলন না করায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে দরিদ্র ক্রেতারা। টিসিবির বগুড়া ক্যাম্প অফিসের অভিযোগের ব্যাপারে ডিলাররা বক্তব্য-চাহিদা থাকলেও ‘নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার জানান, পণ্যের ‘পরিমাণ কম দেওয়ায় গাড়িভাড়া দিয়ে লাভ হয় না।’ তাই তারা মালামাল তুলতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

পণ্য বিতরণের এ অব্যবস্থাপনার কারণে কর্মহীন গরিব মানুষদের দুর্ভোগ কমার সামান্য সুযোগটিও কাজে আসছে না।