একই দিনে ঘরে খাবার না থাকায় রাস্তায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার হাড়ীভাঙ্গায় শতাধিক কর্মহীন মানুষ ত্রাণের জন্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে বুধবার।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় রেস্তোরাঁ শ্রমিকরা সাহায্যের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। করোনাভাইরাস রোধে খাবার দোকান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া শতাধিক শ্রমিক বুধবার দুপুরে অংশ নেন এতে।
হাতীবান্ধা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি সুধা বর্মন রায় জানান, গোটা হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রায় ৩শ হোটেল শ্রমিক রয়েছে। তারা এখন সবাই কর্মহীন। ২০/২৫ দিন থেকে বাড়িতেই বসে।
“জমানো টাকা শেষ করে এখন ধার-দেনায় চলছে সংসার কিন্তু আর তো পারছি না।”
‘কোনো উপায় না দেখে’ তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন দিয়েছেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আসলে তিনি ‘যার যার ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সেখানে হাতে গোনা কয়েকজনকে ত্রাণ দেওয়া হলেও আর কোনো সাড়া পাননি তারা বলে অভিযোগ করছেন এই শ্রমিকরা।
তাদের আবেদনে বলা হয়েছে, এ উপজেলায় প্রায় ৩শ ‘হোটেল শ্রমিক’ রয়েছে। খাবার দোকানে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় কর্মহীন পড়েছেন। এ কারণে ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন।’
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন বলেন, “আমি বাইরে কাজে ছিলাম। তারা এসে অফিসে একটি আবেদন দিয়ে গেছে।
“আমি অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখছি।”
কাজে বাইরে যেতে না পারায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা ‘চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন পার করছেন।’ এক পর্যায়ে ‘বাড়িতে খাবার না থাকায়’ সরকারি ত্রাণের জন্য শতাধিক কর্মহীন মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
খবর পেয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার এসে তাদের ত্রাণ দেওয়ার প্রুতিশ্রুতি দিলে বিক্ষুব্ধরা ঘরে ফিরে যায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার বলেন, “তারা ভুল বুঝে রাস্তায় নেমেছিল। তাদের পর্যায়ক্রমে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলা হলে তারা বাড়িতে ফেরত যায়।”
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস থেকে জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা থেকে এক লাখ ৭ হাজার ৩১৫টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের চাহিদার একটি তালিকা পাওয়া গেছে। ত্রাণ সামগ্রী চেয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় তিনশ সাড়ে উনিশ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ১৭ লাখ আট হাজার টাকা বিতরণের কাজ চলমান আছে।
তবে এক সূত্রে জানা যায়, এ জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় নিম্ন আয়ের ২২ হাজার ২৫০টি পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে এ যাবত ৩১৯ মেট্রিক টন চাল এবং ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।