৪ গুণ বন্দি কুড়িগ্রাম কারাগারে, শঙ্কা সংক্রমণের

বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ ধুকতে শুরু করার পর কুড়িগ্রাম কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চার গুণ বন্দির সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2020, 02:22 PM
Updated : 7 April 2020, 02:29 PM

সরকারের ঘরে থাকার কর্মসূচির মধ্যে আদালত চালু না থাকায় জামিন হচ্ছে না কোনো আসামিরই, তাই দিন দিন বাড়ছেই কারাবাসীর সংখ্যা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার থেকে বন্দিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাৎ করা একদম বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে গত মাসের শেষ দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল,দেশের কারাগারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো বন্দি নেই। বন্দিদের জন্য কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সিলেট, ফেনী ও দিনাজপুর জেলা কারাগারে আইসোলেশন সেন্টার গঠন করা হয়েছে বলেও জানায়।

‘১৬৩ জন ধারণ ক্ষমতার’ কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, মঙ্গলবার এ কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল ৭০৬ জন।

“জেলে ২৯ জন নারী বন্দির মধ্যে পাঁচ নারীর দুগ্ধপোষ্য পাঁচ শিশুও রয়েছে; এদের মধ্যে তিনটি ছেলে ও দুটি মেয়ে।

“এছাড়া ৬৭৭ জন পুরুষ বন্দি আছেন এ কারাগারে।”

বন্দিদের মধ্যে ১০৭ জন পুরুষ এবং তিনজন নারী  সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়া, বিচারাধীন মামলার আসামির মধ্যে ৫৭০ জন পুরুষ ও ২৬ জন নারী আসামি রয়েছেন বলে জানান তিনি।

জেলার লুৎফর রহমান বলেন, “প্রতিদিন নতুন আসামি যুক্ত হচ্ছে জেলখানায়।

“গত ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৭০ জন আসামি নতুন করে যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ ও চারজন নারী। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দিরা।”

বিচারপ্রার্থীদের ১৫ দিনে একবার এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মাসে একদিন স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হতো জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে আসামিদের সাথে সাক্ষাৎ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

“শুধু জরুরি প্রয়োজনে কারাগারের নির্দিষ্ট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিটি বন্দি সপ্তাহে পাঁচ মিনিট করে স্বজনদের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবে।”

এ সুযোগ পেতে হলে বন্দিদের কিছু নিয়ম-কানুনও মানা প্রয়োজন পড়বে বলে জানান তিনি।

জেলার তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, আদালত খোলা থাকলে প্রতিদিন গড়ে ২৫/৩৫ জন আসামির জামিন হয়। তখন আসামিদের চাপ কমত।

“আদালত বন্ধের শেষ দিনের আদেশে ৩৫ জন আসামি মুক্তি পায়। যার মধ্যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন।

“এখন নতুন বন্দি আসছে কিন্তু জামিন মিলছে না।” বন্দিদের মধ্যে অনেক জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামি রয়েওছেন বলে জানান তিনি।

“ফলে বন্দিদের সঙ্গে কারাগার সংশ্লিষ্টরাও পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে” শঙ্কা নিয়ে বলেন তিনি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, “কারাগারে বন্দিরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি আসামি থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

“ওয়ার্ডে ঘুমাতেও হয় গাদাগাদি করে।

“ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

এজন্য বিচার বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছাড়া, কম গুরুত্বপূর্ণ ও জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামিদের জামিনের উদ্যোগ নিতে পারে বলে অভিমক দেন তিনি।

“সেক্ষেত্রে ছুটির সময় একদিন কিংবা একাধিক দিন আদালত বসিয়ে জামিন শুনানি করে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।

“একই সাথে নির্বাহী আদেশেও আসামিদের মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।”

কারাগারের বন্দি সংখ্যা কমানোর জন্য আরও বেশ কয়েকটি পন্থা তিনি তুলেন ধরেন।

তিনি বলেন, বিচারক ইচ্ছে করলে তার জিম্মায়ও আসামিদের জামিন দিতে পারেন। পুলিশ গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারেন,  পুরোনো হুলিয়া আপাতত কার্যকর না করা, জামিনযোগ্য ও কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের এ দুর্যোগকালিন সময়ে গ্রেপ্তার না করা।

“তা হলে কারাগারে চাপ কমবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে।”

আসামিদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “সরকারি নির্দেশনা মেনে কারাবন্দিদের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

“এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি উত্তোরণে বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজা হবে।”

কারাগারে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যা করা হচ্ছে

# করোনাভাইরাস রোধে কুড়িগ্রাম কারাগারের প্রথম ফটক ও দ্বিতীয় ফটকে আসামি ও সাক্ষাৎ প্রার্থীদের এতদিন হাত ধুইয়ে মাস্ক পরিয়ে ঢোকানো হচ্ছিল।

# কারাগারের ভিতরে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন ওষুধ দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে ড্রেন ও ওয়ার্ড।

# প্রতিদিন হ্যান্ড মাইক দিয়ে বন্দিদের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, বিশেষ বিবেচনায় জামিনের লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত ১১০ জন আসামির মধ্যে তিন ধাপে ৫৭ জন আসামির সাজা ভোগের সময় এবং মামলার ধরণ উল্লেখ করে ঢাকায় তথ্য পাঠানো হয়েছে।

“এখন পর্যন্ত পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।”