ঢাকা ফিরতে শিমুলিয়া ঘাটে পোশাক শ্রমিকদের ঠাসা ভিড়

‘কিছু গার্মেন্টস কারখানা খোলায়’ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঠাসাঠাসি করে নদী পারাপার করছে হাজারো মানুষ।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 01:53 PM
Updated : 4 April 2020, 02:15 PM

তবে ভিড়ের কারণে এ জেলার মুন্সিরহাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

শনিবার দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার লোকজনকে ঢাকার দিকে যেতে দেখা যায়। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হচ্ছেন। ফলে করোনাভাইরাস রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বানের তোয়াক্কা না করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য মরিয়া যাত্রীদের ফেরিতে ঠাসাঠাসি করতে দেখা যায়।

মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জিএম আশরাফুল কবির বলেন, “ঢাকায় কিছু গার্মেন্টস খোলার কারণে লোকজন রাজধানীতে ফিরে আসতে শুরু করেছে।”

লোকজন ফেরিতে করেই পার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ চাপ সকালের দিকে আরও বেশি ছিল। লোকজন ঠাসাসাসি করে ওঠার কারণে ফেরিতে যানবাহন উঠার জায়গা থাকছে না।”

দুপুরে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিতে  হাজার হাজার লোক পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ঢাকামুখী যাত্রীর চাপই ছিল বেশি।

বাসসহ গণপরিবহন না থাকায় ফেরি থেকে নেমে বিভিন্ন যানবাহনে  ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন সবাই। নসিমন, মাইক্রো ও মোটরসাইকেলসহ নানা ছোট ছোট যানবাহন যে যেটা পাচ্ছেন তাতেই চড়ে বসছেন।

তবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের লৌহজংয়ের মেদিনী মন্ডলে ডলফিন ট্রেনিং সেন্টারের পাশে সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ চেকপোস্টে কোনো গাড়ি আসলেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা তা উল্টোদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাই এসব যানবাহন লৌহজং-টঙ্গবাড়ী-মুন্সীগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। ভেতরের এ সড়কগুলোতে পুলিশ বা ট্রাফিকের তেমন বাধা নেই বলে  বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সব নিট গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল অন্তত ২৫ লাখ শ্রমিকের রোজগারের প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ২৮৩টি কারখানার সংগঠন বিকেএমইএ।  তবে সরকারি ঘরে থাকার কর্মসূচি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করলেও গার্মেন্টস খোলার পূর্ব ঘোষণায় তারা কোনো পরিবর্তন আনেনি।

ঠাসাভিড় দেখে মুন্সিরহাট বন্ধ করল প্রশাসন 

শনিবার হাটবার থাকায় বিপুল লোকের সমাগম দেখে মুন্সিরহাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ এ হাট সব সময় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।

হাটটি বন্ধ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল কবির জানান, করোনাভাইরাস সংক্রামণ ঝুঁকি থাকার কারণেই হাটটি বন্ধ করতে হয়েছে।

অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী লেফটেন্যান্ট মো. সামিউল বলেন, “করোনার একমাত্র ওষুধ হচ্ছে ঘরে থাকা কিন্তু এই হাটে যেভাবে মানুষজন ভিড় করছিল, এটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছিল।

“তাই সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই প্রশাসন কঠোর হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “জনস্বার্থে মুন্সীরহাট বন্ধ করা হয়েছে। কয়েক দিন ঘরে থেকে একটু কষ্ট করলেও সবার জন্যই ভালো।”

হাটের প্রবল ভিড়ের কারণে বাজার কমিটির লোকজনও হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরে তারার প্রশাসনকে খবর দেয়।

মুন্সিরহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল ওরফে রবি মেম্বার জানান, আগে থেকেই মাইক ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে চর এলাকার পাঁটি ইউনিয়নের সাপ্তাহিক হাটবাজার থাকায় লোকজনের সমাগম বেশি হয়।

“পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এসে হাট বন্ধ করে দেয়। যাতে লোকজন কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য জরুরি কিছু খোলা রাখা হয়েছিল।” 

তিনি জানান, বিকাল ৪টা থেকে সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বড় আকারের এ বাজারে প্রায় ৪শ’ দোকান রয়েছে। রোববার সকাল থেকে কাঁচা বাজারসহ জরুরি কেনাকাটার দোকান চালু করা হবে। নিরাপদ দূরত্বে থেকেই যাতে কেনাকাটা হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।