সব ভয় দূরে ঠেলে সুন্দরবনে মধু আহরণে গেলেন তারা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে মহামারী আতঙ্কের মধ্যে সবাইকে যখন ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে তখন দলবেঁধে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে গিয়েছেন সাতক্ষীরার মৌয়ালরা।

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 07:59 AM
Updated : 4 April 2020, 07:59 AM

এছাড়া বাঘ ও সাপের ভয় ত সেখানে আছেই। প্রতিবছর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকে মারা যান। কিন্তু মৌয়ালরা বলছেন, ১৮ চৈত্র থেকে ১৮ বৈশাখ হল সুন্দরবনের মধু আহরণের সময়। এ সময় ঘরে বসে থাকলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনীর মৌয়াল নজরুল ইসলাম গাজী জানান, প্রতিবছর এই মৌসুমে বনবিভাগকে অগ্রিম কর দিয়ে অনেক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তারা মধু আহরণে যান। কিন্তু এ বছর কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।

নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মধু সংগ্রহের পথে পথে মৌয়ালদের রয়েছে নানা রকম বাধা। তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হল বাঘের হামলা মোকাবিলা।

“বিভিন্ন সময় মধু সংগ্রহে যাইয়ে এই বাঘের থাবায় শতাধিক মৌয়াল মরে গেছে। আর এইবার তার সাথে যোগ হইছে করোনাভাইরাস মহামারী। এ কারণে এইবার উদ্বোধন অনুষ্ঠা হয় নাই।”

মধু সংগ্রহের পুরোটা সময় একটানা সুন্দরবনেই থাকেন মৌয়ালরা। ছোট একেকটা নৌকায় পাঁচ-ছয়জন ঠাসাঠাসি করে থাকেন।

মৌয়ালরা জানান, এই সময়টা তারা সঙ্গে থাকা চিঁড়ে ভিজিয়ে গুড় দিয়ে খান। প্রসাব-পায়খানা করতে হয় জঙ্গলেই। গোসল নদীতে। তখন দলছাড়া হলেই বাঘ বা কুমিরের হামলার আশঙ্কা।

দাতিনাখালীর মৌয়াল খালেক মিয়া বলেন, মৌয়ালদের সারা বছরের একমাত্র কাজ হল মধু সংগ্রহ। এ কারণে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও বন বিভাগ তাদের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আগের নিয়ম পাল্টে এবার এক মাসের বদলে দুই মাস সুযোগ দেওয়া হেয়ছে। ১৮ চৈত্র থেকে ১৮ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত।

“কিন্তু এইবার ১৫ দিন পরপর বনবিভাগে হাজিরা দিয়ার নিয়ম হইছে। এতে বড় ধরনের বিড়ম্বনায় পড়িছে মৌয়ালরা। কারণ মধুর চাক খুঁজতে খুজতে যাতি হয় গহিন বনে। মাঝেমধ্যি উপকূলে ফিরতে দুই দিনও লাগে। এখন ১৫ দিন পরপর হাজিরা দিতে হলি তো ১৩ দিনের মাথায় ফিরে আসতি হবে। এতে ম্যালা সময় নষ্ট হবে। কষ্টও হবে বেশি।”

মৌয়ালরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু কেউ তাদের খবর নেয় না বলে মৌয়াল পরিবারের নারীরা আক্ষেপ করেছেন।

শেফালী খাতুন নামে এক নারী বলেন, মধু সংগ্রহ করতি যাইয়ে সাতক্ষীরায় বহু মৌয়ালের জীবন গেছে। কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।

“সুন্দরবন উপকূলে রইছে শতশত বাঘবিধবা, যাদের স্বামীরা গেছে বাঘের পেটে। যারা বিধবা হয়নি তারা, তাদের সন্তানরা চোখের পানিতে বিদায় দেয় মৌয়ালদের মধু সংগ্রহে যাওয়ার সময়।”

সুন্দরবন বাংলাদেশের মধুর একটি অন্যতম প্রধান উৎস। এখান থেকে প্রতিবছর কয়েকশ টন পায় বাংলাদেশ।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, চলতি মৌসুমে শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১০৫ টন মধু ও ২৬ টন মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বছর সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে ১৭২ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছেন বলে তিনি জানান।