ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত হল

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তিন ম্যাজিস্ট্রেট আর অজ্ঞাত আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম থানায় দায়ের করা অভিযোগ হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 07:44 AM
Updated : 2 April 2020, 08:01 AM

মঙ্গলবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত ১৯ মার্চ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা আরিফুলের পক্ষে অভিযোগের কপি থানায় দাখিল করেন বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকার সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু।

থানার ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, “হাই কোর্টের আদেশের কপি মঙ্গলবার হাতে পেয়েই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তারপর বুধবার আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুলকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে জেল-জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মামলায় রিগ্যান অভিযোগ করেছেন, ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

এজাহারে বলা হয়েছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ মার্চ মধ্যরাতে সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন ও আরও দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জনের একটি দল তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে ডিসি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালান। পরে তার চোখবাঁধা অবস্থায় চারটি স্বাক্ষর নিয়ে কারাগারে পাঠান।

সুলতানা পারভীন ছাড়া অন্য যে তিন আসামির নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলাম।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাজু সরকার বলেন, “সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মামলার আসামিদের সম্মানের কথা বিবেচনা রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।”

এ ব্যাপারে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, “আদালতের প্রতি আমার আস্থা ও বিশশ্বাস আছে। আমি আদালতে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি। সরকার ও আদালত আমার ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে যথেষ্ট সচেষ্ট। তারই অংশ হিসেবে এই মামলা রেকর্ড করা হল। এখন অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমুলক শান্তি দাবি করছি।”

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে আরিফুলকে সাজা দেওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চাপের মুখে আরিফ জামিনে মুক্তি পান। তদন্তে আরিফের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রমাণ পাওয়ায় কুড়িগ্রামের সেই জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এছাড়া একই সঙ্গে সুলতানা পারভীনের এ কাজের সঙ্গী জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়।

পরে কুড়িগ্রামে মোহাম্মদ রেজাউল করিম জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন।