সারা দেশে মানুষের চলাচল ও সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এরই মধ্যে সরকার নয় কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন চাল বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে; যা জেলায় জেলায় ভাগ করে বিতরণ করা হচ্ছে।
তবে ঘরবন্দির ষষ্ঠ দিনে নীলফামারীর কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষ বলছেন- এই সহায়তা অপ্রতুল। কষ্টে থাকা সব মানুষের কাছ পৌঁছাচ্ছে না এসব চাল-ডাল।
নীলফামারী শহরের শাহীপাড়া মোড়ের রিকশাচালক তাইজুল ইসলাম (৫০)। ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে তার প্রতিদিন ৫০০ টাকা লাগে।
মঙ্গলবার বিকালে দিকে শহরের শাহীপাড়া মোড়ের রিকশা স্ট্যান্ডে কথা হয় তার সঙ্গে।
সরকারের নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব বজিয়ে রাখার প্রথম পাঁচ দিন ঘরেই ছিলেন তিনি। দুই দিন জমানো টাকায় আর বাকি তিন দিন ধার করে চালাতে হয়েছে তার সংসার।
ঘরবন্দি থাকায় প্রতি দিনই বাড়ছে তার দেনা। একদিকে ধার-দেনা আর অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের পেটে ক্ষুধা-তাই বাধ্য হয়েই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাইজুল আয় করেছেন ১০০ টাকা। তবে এ আয়ে তার সংসারের খরচ মিটবে না।
তাইজুল বলেন, এখন ঘাটতি মেটাতে তার ধারের পরিমাণ বাড়ছে। সাহায্যর জন্য কারও কাছে গেলেও বিশ্বাস করতে চায় না।
সরকারি-বেসরকারি নানা সাহায্যের কথা তাইজুল শুনেছেন।
তবে অসহায় কণ্ঠে তিনি বলেন, “শহরে অনেকে চাল-ডাল বিতরণ করছে, কিন্তু অভাব থাকলেও লজ্জায় কারও কাছে যেতে পারছি না।
“কবে শেষ হবে এ দুর্যোগ, কীভাবে বাঁচব আমি পরিবারের নিয়ে, তা আল্লায়ই জানে।”
একই অবস্থা জেলা শহরের সরকারপাড়া গ্রামের রিকশাচালক আব্দুস সালামের (৪৫)।
তিনি বলেন, “পাঁচ দিন বাড়িত আছিনু। জমা ১০০০ টাকা আর হাওলাদি ৫০০ টাকা শ্যাষ।
“এলা রিকশা নিয়া বেড়ে আসিলেও প্যাসেঞ্জার নাই। ইলিফের চাইলেও হামার অভাবোক বিশ্বাস করে না।”
অভাবে শুধু তাইজুল আর সালামরাই নন, বেকার হয়ে পড়া অন্য পেশার শ্রমজীবীরাও অভাবে কাটাচ্ছেন দিন।
সরকারি খাদ্য সহায়তা, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা অপর্যাপ্ত বলছেন তারা।
শহরের মড়াল সংঘ মোড়ের ভৌমিক বস্ত্রলায়ের কর্মচারী মাছুয়াপাড়া মহল্লার শাহিন হোসেন (৩৫) বলেন, “করোনার জন্য গত ২৫ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ রেখেছে মালিক। সামান্য বেতনে চার সদস্যের সংসার চলে।
“পাঁচ দিন থেকে দোকান বন্ধ থাকায় মানুষের কাছে ধার দেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখন কেউ আর টাকা ধার দিতে চায় না, এ পরিস্থিতে পরিচিত দোকানে গিয়ে বাকিতে খরচ চাইলে দোকানদারও খরচ দিচ্ছে না।”
তিনি বলেন,“আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। সরকারের ত্রাণ পর্যন্ত আমাদের ঘরে আসে না।”
“ব্যক্তিগতভাবে যারা খাদ্য দিচ্ছে তারাও আমাদের দেয় না। আর আমরাও লজ্জায় তাদের কাছে যেতে পারছি না।”
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত জানান, প্রয়োজন ভিত্তিক খাদ্য সহায়তায় জেলায় বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ নয় লাখ টাকা।
এরই মধ্যে জেলার ৬টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়ার পর মজুদ রয়েছে ১৫৪ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ টাকা।