আতঙ্কে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল রোগী শূন্য

করোনাভাইরাস আতঙ্কে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2020, 03:54 PM
Updated : 30 March 2020, 03:59 PM

সোমবার দুপুরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আগে সেখানে হাসপাতালের সিট পাওয়া তো দূরের কথা, মেঝে বা করিডরে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হতো। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেই চেনা চিত্র পাল্টে গেছে এ হাসপাতালের।

প্রতিটি কক্ষে সিট শূন্য পড়ে আছে। আউটডোরেও কোনো রোগীকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা যায়নি। তবে আউটডোরে এবং জরুরি বিভাগে দু’জন চিকিৎসককে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের সেবায় দুইজন নার্স এবং একজন আয়াকে কর্মরত দেখা গেছে। দুপুরে আউটডোরে রোগী উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২ থেকে ৩ জন।

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হারুণ-অর-রশিদ বলেন, “করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। যারা আগে ভর্তি ছিলেন, তারা ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

“সোমবার হাসপাতালে দুইজন রোগীকে ছুটি দিই কিন্তু গতকাল ১৭ জন রোগী আমাদের না বলে পালিয়ে যায়। তাই হাসপাতাল প্রায় রোগী শূন্য।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে রোগী ছিল ২০০ থেকে ২১০ জন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত রোগী ছিল মাত্র ১২ জন। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন।

‘মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এখন রোগী আসা অনেক কমেছে।’

সুত্রটি আরও জানায়, গত পহেলা মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত এই হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। গত এক সপ্তাহ আগে এখানে নিউমোনিয়ায় তিনজন রোগী ভর্তি হয়। তারা সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

বহিঃবিভাগের টিকিট বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে কম রোগী আসছেন। যে কয়েকজন আসেন তাদেরকে জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের ২৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন গাইবান্ধা পৌরসভার বানিয়ারজান এলাকার রোখছানা খাতুন (২৫) বলেন, জমি নিয়ে মারামারির কারণে আহত হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি, ওষুধ ও খাবার পাচ্ছি কিন্তু চিকিৎসকরা নিয়মিত দেখছেন না।

রোখসানার আত্মীয় জলিল মিয়া বলেন, “গত শুক্রবার এখানকার আইসোলেশনে দুইজন রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এখানে থাকা যাবে না। আজই বাড়ি যাব।”

হাসপাতালের ২৫ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের ময়না খাতুন (৩২) জানান, জমির শরিকের সঙ্গে মারামারিতে আহত হয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালে আছেন।

“ওষুধ শুধু ট্যাবলেট পাচ্ছি। খাবারও ঠিকমত পাচ্ছি কিন্তু করোনার ভয় লাগছে।”

হাসপাতালের ১৪ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন সাদুল্লাপুর উপজেলার মীরপুর গ্রামের ফেনসি খাতুন (৪০) জানান, গত ২১ মার্চ গাইবান্ধা-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের দিন বাড়িতে মারামারির ঘটনায় আহত হন তিনি। সেদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রয়েছেন।

“কিন্তু আর হাসপাতালে থাকব না। হাসপাতালে করোনা রোগী আসছে, তাই বাড়ি যাব।”

সোমবার দুপুরে কর্তব্যরত নার্স শিরিনা খাতুন বলেন, “প্রতিদিন হাসপাতালে ২-১ জন করে মারামারির রোগী ভর্তি হচ্ছে। কে কোথায় থেকে আসছে, কার শরীরে কী রোগ আছে, আমরা জানি না। অথচ তাদেরকে আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে।

“আমাদেরকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গাউনসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে আমরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি।”