করোনাভাইরাস: সঙ্কট কাটাতে ফরিদপুরে দুধ থেকে ক্রিম

নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ফরিদপুরের দুধ বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খামারিরা ক্রিম তৈরি করে সংরক্ষণ করছেন।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 07:25 AM
Updated : 28 March 2020, 07:34 AM

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লাহ মো. আহসান জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় চাষিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এদিকে মিষ্টির দোকানও বন্ধ থাকায় স্থানীয় দুধের চাহিদা কমেছে। এছাড়া দুধের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে গুজ ছড়িয়েছিল। প্রশাসন প্রচার চালালেও গুজবের প্রভাব এখনও রয়েছে। এসব কারণে খামারিদের দুধ নষ্ট না করে ক্রিম করে সংরক্ষণের পরার্মশ দেওয়া হয়।

ফরিদপুরে প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয় বলে তিনি জানান।

প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এ জেলার চরাঞ্চল ও বিল এলাকায় মাষকলাইসহ বিভিন্ন জাতের ডালের চাষ হয়। এ মৌসুমে প্রচুর ঘাস মেলে। এই ঘাস দুধ উৎপাদন বাড়ায়। তাই এ মৌসুমে এ জেলায় দুধ উৎপাদন বেড়ে প্রায় ২০ হাজার লিটার বলে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লাহ বলেন, শহরের একটি আইসক্রিম কারখানার মেশিনে এই দুধ থেকে ক্রিম করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ১০০ লিটার দুধ থেকে ক্রিম তৈরি করা যায়। ১০০ লিটার দুধে প্রায় ৩০ লিটার ক্রিম হয়। তাই অনেকেই ক্রিম করিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করছেন। অনেকে ক্রিম জ্বাল দিয়ে ঘি বানিয়ে ফেলছেন।

দীর্ঘদিন এ অবস্থা চললে এই ক্রিম থেকে সহজেই ঘি বানিয়ে ফ্রিজে না রেখেও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যাবে বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির বলেন, তার ইউনিয়নে মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎসব গবাদিপশু পালন। করোনাভাইরাসের কারণে চরাঞ্চলের খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন।

পদ্মা নদীবেষ্টিত নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যার মোস্তাকুজ্জামান ।

তিনি জানান, তার ইউনিয়নে এক হাজারের বেশি খামারি রয়েছেন । অধিকাংশ খামারি দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন পানির দামেও বিক্রি করতে পারছে না দুধ।

ফরিদপুরের কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়ায় কিছু খাবার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। এই গুজবের কারণে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রি বেশ কমে যায়। দুধের দাম লিটারপ্রতি ৫০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসে। অনেক এলাকায় প্রতি লিটার দুধের দাম ১২ টাকায় নেমে আসে।

এরপর গুজব ঠেকাতে কাজ শুরু করে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। ফলে মাছ, মাংস, ডিম বিক্রি বাড়লেও আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি ধুধের দাম। প্রচুর পরিমাণে দুধ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। পরে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে খামারিদের ক্রিম তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

তবে ফরিদপুরের ওই একটি কারখানায় এক দিনে ৫০০ লিটার দুধ থেকে ক্রিম তৈরি করা যায়।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লাহ বলেন, চাহিদা তৈরি হওয়ায় আরও কয়েকজন মেশিন কিনতে চেয়েছেন। তারা কিনলে খামারিরা উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।