ঘরবন্দির প্রথম দিন: বাগেরহাটে জীবন যেমন

বাগেরহাট জুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে থাকতে শুরু করেছে বাসিন্দারা।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2020, 06:16 AM
Updated : 26 March 2020, 06:20 AM

বুধবার দুপুর থেকে বাগেরহাট প্রধান শহর, বাজার, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ী, ছোট ছোট চায়ের দোকান বন্ধ রেখে এসব মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল গাড়ি রাস্তায় ঘুরতে শুরু করে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ওষুধের দোকান আর কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রতিদিনের জমে ওঠা বিভিন্ন মোড়ের আড্ডা নেই। কোথাও একটি দুইটি চায়ের দোকান খোলা থাকলেও ভিড় নেই। রাস্তাঘাট ফাঁকা তবে ‘অতিপ্রয়োজনে’ নামা কিছু মানুষকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, বাগেরহাট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সচেতন করছে। তারা সবাইকে ঘরে থাকা এবং যারা সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন তাদের ১৪ দিনের জন্য সঙ্গ নিরোধে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকতে অনুরোধ করেছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেছেন-যার যার ঘরে থাকুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন। ঘরে থাকার অনুরোধের সাথে হুঁশিয়ারও করেছেন-অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রিকশাচালক মধু বালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চলে। রাস্তায় কোন লোক নেই, তাই ঘরে ফিরে যাচ্ছি। আয় করতে না পারলে সংসার চলবে না, কষ্ট হবে।

“তবুও ঘরে থাকলে যদি করোনাভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাই তাই আগামী কয়দিন ঘরেই থাকব।”

সত্তরের কাছাকাছি বয়সের কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, “আমরা এখন আছি মৃত্যু ভয়ে। মরণ ভাইরাসকরোনা আমাদের ঘরে ঢুকতে বাধ্য করেছে। বাগেরহাটে আজ সন্ধ্যার পর থেকে যে নীরবতা তা আমাকে অবাক করেছে। সব মানুষ ঘরে ঢুকে গেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। মানুষ সচেতন হয়েছে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। মুখে মাস্ক, হাতে হ্যান্ড গ্লাভস।”

জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাসকে বিদায় জানানোর প্রত্যাশা এই নাগরিক নেতার।

বাগেরহাটের ব্যবসায়ী সঞ্জয় দামসহ একাধিক ব্যবসায়ী রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে জানান, সরকারের বার্তা তারা পালন করতে চান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে কয়েকদিন তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবেন তারা।

বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দীন এই প্রতিবেদককে বলেন, করেনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে বাগেরহাটের মানুষকে ঘরমুখি করতে আমরা সব ধরনের প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। এলাকার জনগন আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘরে থাকছে এ্টা আমাদের সবার জন্য মঙ্গল হয়েছে। এই কয়দিন তারা যদি নিয়ম মেনে ঘরে থাকে তাহলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক কমে আসবে।

ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাহিরদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এলাকার জনসাধারণকে সজাগ করতে কয়েকদিন ধরে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নানা প্রচার চালানো হয়।

“সবাই যদি আমরা নিয়ম মেনে ঘরে থাকি তাহলে আমরা সবাই সুস্থ থাকতে পারব।”

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জনগণকে সচেতন করতে নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হয়েছে।

“এখনো যারা অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আছেন, তাদের ঘরে ফিরতে অনুরোধ করছি। তা না হলে রাস্তার টহলে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”

জেলার দরিদ্র মানুষদের ব্যাপারে তিনি জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের তালিকা করে সবাইকে সহযোগিতা করা হবে।

জেলায় গত ২২ দিনে চার হাজারের বেশি মানুষ ভারতসহ ৩৮ দেশ থেকে বাগেরহাটে ফিরেছেন। তারা যেন অবশ্যই ১৪ দিনের হোম কায়ারেন্টাইনে থাকেন।

“আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ভেতরে থাকলে সবাই সুস্থ থাকতে পারব। আমি আবারও বলব অত্যাবশ্যক কারণ ছাড়া একদম ঘরের বাইরে নয়।”