রাঙামাটির অসুস্থ ৫ ভাইকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে

রাঙামাটির দুর্গম পাহাড় থেকে একই পরিবারে হাম আক্রান্ত পাঁচ ভাইকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 04:05 PM
Updated : 25 March 2020, 04:12 PM

বুধবার বিকালে বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়ন থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

এখনো সাজেক ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে ১২৩ শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। তাদের চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের তিনটি মেডিকেল টিম। অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল টিমও সেখানে রয়েছে বলে জানা গেছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নেয়া পাঁচ ভাই হল, প্রহিত ত্রিপুরা (৭), রখেন ত্রিপুরা (৮), রকেট ত্রিপুরা (৯), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০) ও দিপায়ন ত্রিপুরা (১১)। এরা সবাই শিয়ালদহ মৌজার লংথিয়ান পাড়ার বাসিন্দা অনীল মোহন ত্রিপুরার ছেলে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমদ জানিয়েছেন, সাজেকে হামে আক্রান্ত একই পরিবারের পাঁচ শিশুর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বুধবার বিকালে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় হেলিক্যাপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া হয়েছে তাদের।

“এর আগে তাদের পাঁচজনকে দীঘিনালা নিয়ে আসা হয়। পরে দীঘিনালা থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা পাঁচজনই অসুস্থ আছে।

“এখনো সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১২৩ জন শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় তিনটি মেডিকেল সেখানে কাজ করছে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও বিজিবির মেডিকেল কাজ করছে।”

সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের অরুণপাড়ায় হামে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শিশু মারা যায়। এছাড়া গত রোব ও মঙ্গলবার ইউনিয়নের লংথিয়ান পাড়ায় আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাজেকের দুই গ্রাম অরুণ ও লংথিয়ান পাড়ায় সাত শিশুর মৃত্যু হল।

এখনো এ ইউনিয়নের অরুণপাড়া, লংথিয়ান পাড়া, কমলাপুর পাড়া, তারুং পাড়া ও হাইচপাড়ায় আরও ১২৩টি শিশু হামে আক্রান্ত রয়েছে। তবে মেডিকেল টিম সেখানে চিকিৎসা সেবা শুরু করার পর নতুন করে কেউ হাম রোগে আক্রান্ত হয়নি বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বিশ্ব জুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী সময়ে সাজেকে হাম রোগে পরপর সাত শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এ ইউনিয়নের আশপাশের গ্রামের মানুষেরা শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে।

১৬৯ নং শিয়ালদহ মৌজার হেডম্যান যুপিইথাং ত্রিপুরা জানিয়েছেন, ‘সাজেকের পাঁচ গ্রামে এখনো শতাধিক শিশু হামে আক্রান্ত। বুধবার বিকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একই পরিবারের পাঁচ ভাইকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় হেলিক্যাপ্টারে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) নেয়া হয়েছে।

“যতটুকু জানতে পেরেছি, গুরুতর আক্রান্ত পাঁচ ভাই এখন সুস্থ আছে।”

এছাড়া সাজেকের পাঁচ গ্রামের আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর ও বিজিবির তত্ত্বাবধানে আরও একটি চিকিৎসকদল লংথিয়ান পাড়ায় এসেছে। ওই মেডিকেল টিমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাবার এবং ওষুধও আনা হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের মাঝে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। এ উপজেলার সবচেয়ে বড় ও দুর্গম ইউনিয়ন সাজেক। এ ইউনিয়নে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। সেখানকার শিয়ালদহ এলাকাটিকে সবচেয়ে বেশি দুর্গম বলে বিবেচনা করা হয়। প্রায়ই সেখানে দুর্গমতার কারণে খাদ্যাভাব ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির ঘটনা ঘটে।

২০১৫ সালের মে মাসে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় ওই এলাকায় সাতজনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত আরও ৩০ জন জরুরি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেন।

৬০৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। কিন্তু যোগাযোগ দুর্গমতা ও সীমান্তবর্তী অনতিক্রম্য এলাকা হওয়ায় সরকারি জরুরি চিকিৎসা সেবা সেখানে নিয়মিত পৌঁছায় না।