গাইবান্ধার `হাসপাতালে মাস্ক-গাউন দেয়নি'

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটের কর্মীরা পায়নি কোন মাস্ক ও গাউন।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2020, 04:14 PM
Updated : 21 March 2020, 04:48 PM

শনিবার এই হাসপাতালের কয়েকজন সেবিকা জানিয়েছেন তাদের না দেওয়া হয়েছে মাস্ক, গাউনসহ সুরক্ষার কোন সরঞ্জাম, না পেয়েছেন কোন প্রশিক্ষণ।

সদ্য বিদেশফেরত ১০৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এ জেলায় এ হাসপাতাল সংলগ্ন একটি ভবনের নিচতলায় পাঁচ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে, সরকারিভাবে তাদের জন্য মাক্স, গাউন ও অন্যান্য সামগ্রী বরাদ্দ আসেনি।

তবে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বিভিন্ন জেলায় ৮৭ হাজার গ্লাভস, ১৭ হাজার ৭৮৫টি হ্যান্ড রাব, ৪৮ হাজার ২০০টি ফেইস মাক্স-ক্যাপ-জুতার কাভার, ১৩ হাজার ৪৩টি সার্জিক্যাল মাস্ক, প্রটেকটিভ কভার অল, ৫০০টি কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেক্টর, ৩ হাজার ৩৮০টি গাউন, ৫ হাজার ৫৭০টি আই প্রটেক্টর বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া সেন্টার ফর মার্কেট অ্যান্ড কনজ্যুমার ডেভেলপমেন্ট-সিএমএসডিতে ১৬ হাজার ১০০টি গ্লাভস, ২২ হাজার ২৯৫টি হ্যান্ড রাব, ৩ হাজার ৪৭৯টি সার্জিক্যাল মাস্ক, প্রটেকটিভ কভারঅল, ৩৪০টি কম্বো সার্জিক্যাল প্রটেক্টর, ১২ হাজার ৬২০টি গাউন, ৪ হাজার ৪৩০টি আই প্রটেক্টর বিতরণ করা হয়েছে।

আর কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন তৈরি করে সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আইসোলেশন ইউনিটে তিনটি পুরুষ ও দুইটি নারী রোগীর জন্য মোট পাঁচটি শয্যা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

দুপুরে কর্তব্যরত নার্স শিরিনা খাতুন বলেন, “প্রতিদিন আমাদের অসংখ্য রোগীকে সেবা দিতে হয় কিন্তু আমরা সরকারি মাস্ক ও গাউন পাইনি। নিজেদের কেনা মাস্ক ব্যবহার করছি।

“তবে হাসপাতালের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাতের গ্লাবস ব্যবহার করছি।”

আরেক নার্স স্বপ্না রানী সরকার বলেন, “প্রতিদিন হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছে, কে কোথা থেকে আসছে, কার শরীরে কী রোগ আছে, আমরা জানি না। অথচ তাদেরকে আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে।

“তবে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মাস্ক, গাউনসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে আমরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি “

আরেক নার্স তাহেরা হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে কীভাবে সেবা দেব সে বিষয়ে আমাদেরকে কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে কোন নির্দেশনাও পাইনি।

“টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেটুকু শিখছি, তা নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি।”

প্রতিদিন গড়ে সাত-আটজন সর্দি কাশির রোগী ভর্তি হওয়া এ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমন প্রামানিক শনিবার দুপুরে বলেন, গতকাল সর্দি কাশির ছয়জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে আসছেন কিন্তু তাতে আক্রান্ত নন।

“প্রতিদিন বহিঃবিভাগে ২০৫-৩০০ জন রোগী দেখতে হয়। তাদের মধ্যে বিদেশ ফেরত থাকতে পারে। ফলে আমরাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমরা প্রতিদিন অনেক রোগী দেখি।

“আমরা আক্রান্ত হলে আমাদের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াবে কিন্তু সরকারিভাবে মাস্ক ও গাউন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহফুজার রহমানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে; যাদের কাজ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা ফলোআপ, দেখাশোনা ও জাতীয় কমিটিকে তথ্য জানানো।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহফুজার রহমান বলেন, “মাস্ক ও গাউনসহ অন্যান্য সামগ্রী ঢাকা থেকে কুরিয়ারে গাইবান্ধায় পাঠানো হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে পাব বলে আশা করছি।

“কারোনাভাইরাসের উপর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ঢাকায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি পর্যায়ক্রমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।”   

অন্যদিকে, জেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গাইবান্ধায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা ও সাত উপজেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠিত হয়েছে।

এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যাপিড রেসপন্স টিমও গঠিত হয়েছে। গাইবান্ধা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানান তিনি।

“চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ জেলা শহরে মাইকিং করছে কিন্তু গ্রামাঞ্চলে প্রচার নেই।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার চাপাদহ গ্রামের মো. কাশেম (৪৫) বলেন, সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস আতঙ্ক চলছে। বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয় কিন্তু সরকারিভাবে প্রচারের অভাবে মানুষ সচেতন হচ্ছে না।

একই গ্রামের রায়হান মিয়া (৫০) বলেন, কে বিদেশ থেকে এসেছে, আমরা তা জানি না। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে প্রচুর লোকের আগমন ঘটে। কিন্তু সরকারি প্রচারণা নেই। কারণ করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ তা তারা জানেন না।