করোনাভাইরাস: বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান, ব্যবসায়ীদের বাধা

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রতিবাদে রাজশাহী ও রংপুর নগরীতে কিছু ব্যবসায়ী রোববার থেকে পাইকারি বাজার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

জেলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2020, 01:14 PM
Updated : 21 March 2020, 01:43 PM

শনিবার রংপুর নগরীর জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট ও নবাবগঞ্জ বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যদের অবরুদ্ধও করেন ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণে মানুষের খাবারসহ নিত্যপণ্য কেনার হুড়োহুড়ির মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। 

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেশি রাখার কারণে শনিবার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

রাজশাহী

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রতিবাদে রাজশাহীর কাঁচাবাজার পাইকারি ব্যবসায়ীরা শনিবার বিক্ষোভ করেছেন।

এর আগে শনিবার দুপুরে পেঁয়াজের দাম বেশি নেওয়া রাজশাহী সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচা পণ্যের পাইকারি বাজারে এক ব্যবসায়ীর ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করে বাজার বন্ধের ঘোষণা দেন।

কাঁচাবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, “আমরা যে দামে পণ্য কিনছি তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের লোকজন। মালামাল কেনার রশিদ দেখিয়েও লাভ হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন।”

রাজশাহী

তিনি বলেন, “আমাদের পোঁয়াজ কেনা ৪২ টাকার উপরে পড়ে গেছে। সেখানে ৩৫ টাকা করে বিক্রি করা সম্ভাব নয়। তাই বাজার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।”

জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন তাদের কোনো জরিমানা করা হচ্ছে না।

“আমরা কেবল অসাধু ব্যবসায়ীদের আইন মেনে অর্থদণ্ড দিচ্ছি। এতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমরা বাজারে অবস্থান করে মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাব।”

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে লিটন হাজি নামের একজনের আড়াতে সেই পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছিল। এ কারণে জরিমানা করা হয়েছে।

রংপুর

রংপুর নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারে বাধার মুখে পড়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

করোনাভাইরাস ছড়ানোর মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুদিন ধরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছে।

রংপুর

প্রত্যক্ষদর্শীরা জান, দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট রাহাদ কুতুবের নেতৃত্বে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট ও পরে নবাবগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এ সময় বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগে একটি দোকানকে ৫ হাজার টাকা ও পরে আরেকটি দোকানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় ব্যবসায়ীরা সব দোকানপাট বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের একটি দোকানে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।

নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যায়ভাবে জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাজার বন্ধ ঘোষণা করলাম।”

সাতক্ষীরা

জিনিসপত্র উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে বাজার অস্থিতিশীল করা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ও পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নয় ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।  

শনিবার দুপুরে শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।

সাতক্ষীরা

আসাদুজ্জামান জানান, কাঁচামাল পাইকারী ব্যবসায়ী মেসার্স রনি ভান্ডারের মালিক আব্দুল গফফরকে ভূয়া ভাউচার বানিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা ও খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইশার আলীকে বেশি দামে সবজি বিক্রির অভিযোগে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা বাজারের দুই কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে, তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা ও ত্রিশমাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজহার আলী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ছয় ব্যবসায়ীকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। 

নেত্রকোণা

নেত্রকোণায় চাল, ডাল, আলু, রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর কারণে আট ব্যবসায়ীকে ২২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

নেত্রকোণা

দণ্ডিতরা হলেন পৌর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আজিজুল হক, লিটন, আবুল কালাম আজাদ, হাদিছ মিয়া, সুবল চন্দ্র দাস, লোকমান মিয়া, মেছুয়া বাজারের শহীদ মিয়া ও জয়ের বাজারের প্রদীপ।

জেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আজমল হোসাইন বলেন, শনিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন জয়েরবাজার, পৌর সুপার মার্কেট, মেছুয়াবাজারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম অব্দুল কাইয়ুম, নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ ও লোকমান হোসেন পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন।

ভোলা

জেলার সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় চাল-পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় ২৬ ব্যবসায়ীকে চার লাখ তিন হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শনিবার দিনব্যাপী এসব অভিযান চালানো হয়।

সদরের ৮ ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, দৌলতখানে পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৫১ হাজার টাকা, লালমোহনে ৭ ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ও মনপুরা উপজেলায় ৬ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। 

ভোলা

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিয়াস চন্দ্র দাস ও নাদির হোসেন শামিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে জেলা শহরের খালপাড় রোডে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লালামোহন বাজারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান রুমির নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।

দৌলতখান উপজেলায় শুক্রবার রাতে অভিযান চলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জীতেন্দ্র কুমার নাথের নেতৃত্বে।

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে ভ্রম্যমাণ আদালত চালানো হয়।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যবসায়ী চাল-পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বেশি দামে বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার নিযন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে পৌর শহরের পূর্ব বাজারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্তি মূল্য নেওয়ায় চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জয়পুরহাট

শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। 

মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় শুরু করেছে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোল্লা ট্রেডার্স, জনতা স্টোর, জাহানারা স্টোর, বাবু স্টোর নামের চার প্রতিষ্ঠানকে মোট ১২ হাজার ৫ শত টাকা জরিমানা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ

বাড়িতে ওষুধ মজুদ ও বেশি দামে চাল বিক্রির দায়ে পৃথক অভিযানে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শনিবার দুপুরে বন্দর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকারের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়।

অভিযানকালে ওষুধ ব্যবসায়ী শরিয়ত উল্লাহকে ৫০ হাজার টাকা, মদনগঞ্জ এলাকার চালের আড়ৎ জননী এন্টারপ্রাইজের মোজাফফর হোসেনকে ৫ হাজার এবং সিকদার এন্টারপ্রাইজের এস এম মাসুদকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বন্দর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, অবৈধভাবে বাড়িতে ওষুধ মওজুদ করার দায়ে ওষুধ ব্যবসায়ীর ৫০ হাজার টাকা, বেশি দামে চাল বিক্রির দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।