শিবচরে দোকানপাট, গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2020, 12:47 PM
Updated : 19 March 2020, 05:17 PM

কিছু এলাকায় এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

শিবচরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপজেলার বাজারগুলোতে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানপাট, বিয়ে, মাহফিল, রাজনৈতিক সমাবেশসহ সব ধরনের গণজমায়েত ও ধর্মীয় সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। নসিমন, করিমনসহ সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে।”

তবে ওষুধ, কাঁচামাল ও মুদি দোকানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান এই আদেশের বাইরে থাকবে বলে জানান তিনি।

আসাদুজ্জামান বলেন, বিকালে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় উপজেলাবাসীকে ‘করোনাভাইরাস মুক্ত’ রাখতে এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার, শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম, সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আবির হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশে কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ার পর এই প্রথম কোনো উপজেলায় সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

বিদেশ থেকে বিশেষ করে ইতালি থেকে আসা অনেকে এই উপজেলার বাসিন্দা বলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে।

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের দেশে সংক্রমণ রোধে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার উপর সরকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সরকার।

কিন্তু অনেকেই তা না মানায় বিদেশ ফেরত এই ব্যক্তিদের মাধ্যমেই দেশে কভিড-১৯ রোগের বিস্তার ঘটেছে বলে আইইডিসিআরের তথ্য।

বৃহস্পতিবার যে তিনজন নতুন রোগী ধরা পড়েছেন, তারাও ইতালি ফেরত একজনের স্বজন বলে জানানো হয়েছে।

বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিন না মানা দেখে উষ্মা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “অনেক জায়গায় দেখা গেছে প্রচুর প্রবাসী চলে এসেছে, এমনও আছে তারা সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে কারও থাকলে ঘুরে বেড়ালে সংক্রমণ হবে।

“এ সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। এই মুহূর্তে কোথাও শাটডাউন করা বা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে সেটি যে কোনো জায়গায় হতে পারে।”

মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শিবচর এলাকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, “অন্যান্য জেলায় যতটুকু লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, ওখানে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। ১৭ জন যে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে বেশিরভাগ অংশ ওখানকার।

“এ কারণে ওই এরিয়াকে ভারনাবেল, ক্রিটিক্যাল মনে করি। যদি সত্যি বেড়ে যায়, তাহলে ওই এলাকাগুলো আমরা লকডাউন করব।”

যেখান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল, সেই চীনের হুবেই প্রদেশে এলাকাভিত্তিক চলাচল বন্ধ ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সুফল পাওয়া যায়, যাকে বলা হচ্ছে ‘লকডাউন’। ইউরোপ, আমেরিকাতেও বিভিন্ন দেশে এখন এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা এই রোগ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উত্তম পন্থা। আমরাও যদি দেখি করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই আমরা লকডাউনে চলে যাব।”