কোয়ারেন্টিনে না থেকে গ্রামে ঘোরার অভিযোগ

দুই হাজারের বেশি সদ্য বিদেশফেরত প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2020, 07:48 PM
Updated : 16 March 2020, 02:32 PM

তাদের সবাই একাকি থাকার নিয়ম মানছেন কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অন্তত একজনের বিরুদ্ধে নিয়ম অমান্য করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়াও গেছে।

চীনের উহানে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সেদেশে পরিস্থিতি অনেকটা স্তিমিত হলেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এর সংক্রমণ। বিশ্বের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ থেকে সাধারণ মানুষ সবাইকেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বে দেড় লাখের বেশি এতে আক্রান্ত হয়েছেন আর মারা গেছেন সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। এর মাঝে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। এতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।

ফলে বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে একাকি বসবাসে রেখে পর্যব্ক্ষেণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ফেরা প্রবাসীদের খবর দিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

বেনাপোল

যশোরের শার্শায় গত ১৩ মার্চ ইতালি থেকে ফেরা ৫৩ বছর বয়সী এক প্রবাসী 'হোম কোয়ারেন্টিনে' না থেকে গ্রামে ঘোরাফেরা করছেন বলে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

তার এমন অবাধ চলাফেরায় গ্রামবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউছুপ আলী জানান, গত ১৩ মার্চ বিমানে ঢাকায় আসেন এই প্রবাসী। 

“শনিবার সন্ধায় জামতলা বাজারে তাকে ঘুরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয়রা ভীত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে খবর দেন।

"সে রাতেই তাকে বাইরে ঘোরাফেরা না করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়ে আগামী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

সার্বক্ষণিক তার গতি বিধি লক্ষ্য করার জন্য দুইজন স্বাস্থ্য সহকারীকে সর্তক রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ইতালি থেকে ফিরে আশা ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।

চাঁদপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে ১৭৪ জন

চাঁদপুরে রোববার ১৭৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।

গত ১২মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রোববার দুপুরে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাখাওয়াত উল্ল্যাহ সাংবাদিকদের জানান, এই মুহূর্তে অবজার্ভেশনে আছেন ১৭৪ জন।

“যারা অবজার্ভেশনে আছেন তাদের মধ্যে সিংগাপুর থেকে আসা ৫৪ জন, ইতালি থেকে ৩৩ জন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চারজন, চীন থেকে দুই জন, মালয়েশিয়া থেকে ৭৮ জন, যুক্তরাষ্ট্র আটজন ও ইংল্যান্ড থেকে দুইজন।”

এছাড়া পর্যবেক্ষণের সময়কাল ১৫ দিন পার করেছেন ৫৬১ জন।

ফলে শনিবার পর্যন্ত চাঁদপুরে ১০০৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেও রোববার তা কমে ৪৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

ফেনীতে আরও তিনজন হোম কোয়ারেন্টানে

ফেনীতে বিদেশ প্রত্যাগত আরও তিনজনকে হোম কোয়ারেন্টানে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত পাঁচদিনে জেলায় বিদেশফেরত মোট ১৪ জন এবং তাদের পরিবারের ৬৮ সদস্যকে  হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে।

ফেনীর সিভিল সার্জন সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত শনিবার ফেনীর পরশুরামের বিলোনীয়া স্থল বন্দর হয়ে ১৮ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে প্রত্যাগত তিনজন ফেনীর বাসিন্দা। অপর ১৫ জন অন্য জেলার বাসিন্দা। ফেনীর  বাসিন্দা তিনজনকে হোম কোয়ারেন্টানে নেওয়া হয়েছে।

“বিদেশ প্রত্যাগতদের দেশে ফেরার খবর পাওয়া মাত্রই এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

রোববার পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জে প্রবাস ফেরত ৫জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে

ইতালি, ওমান ও স্পেন ফেরত পাঁচজনকে সুনামগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ইতালি, ওমান ও স্পেন ফেরত একজন করে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার প্রবাস ফেরা পাঁচজনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে মেডিকেল চেকআপ করা হয়। পরে রোববার তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলায়। 

হোম কোয়ারেন্টিনে ১৪দিন রাখা হবে।

গাইবান্ধায় আরও ৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে

গাইবান্ধায় সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে ফেরা আরও ৮ জনকে রোববার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

এরআগে ৭ মার্চ থেকে চীন থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আসা চারজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মজিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণ এ চারজন চীনার শরীরে পাওয়া যায়নি। তারা এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফেরত জেলার ফুলছড়িতে সাতজন ও সুন্দরগঞ্জে একজনকে রোববার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। 

ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুজ্জামান জানান, ফুলছড়ির সাত জনের মধ্যে দুইজন মালয়েশিয়া ও ইতালি, সৌদি আরব, কুয়েত, মালদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন করে সম্প্রতি দেশে আসেন। তাদের বাড়িতে আলাদা কক্ষে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা সুস্থ। তারা প্রত্যেকেই ফেরত আসা দেশের (কর্মস্থল দেশের) স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিমান বন্দর কতৃপক্ষ বিষয়টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রত্যায়ন দিয়েছেন। তারপরও সতর্কতার জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং  স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান সরকার জানান, সম্প্রতি ভারত থেকে ফেরা এক ব্যক্তিকে রোববার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। 

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ জানান, “এর আগেও চীন থেকে চারজন এ জেলায় ফিরেছিলেন। তাদের কর্মস্থলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। তাদের কোয়ারেন্টিন সময় পার হয়েছে। তাদের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তারা বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।

মৌলভীবাজারে বিদেশ ফেরত ৩২ জন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলায় বিদেশ ফেরত ৩২ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা: তৌহিদ আহমদ বলেন, এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে ২২ জন, কমলগঞ্জে সাতজন, বড়লেখায় একজন ও কুলাউড়ায় দুইজন রয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভুইয়া জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের মধ্যে ভাইরাসজনিত কোন সমস্যা আছে কিনা সেটার জন্য তাদেরকে নিজ বাসায় ‘হোম কোয়ারেন্টানে’ থাকতে বলা হয়েছে। 

১০ /১৫ দিন আগে দেশে আসা দুইজনকে সীমিতভাবে চলাফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান, এখানকার অনেক মানুষ প্রবাসী। তাই কড়া নজরদারী রয়েছে।

তবে মৌলভীবাজারে এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকা কারো মধ্যেই করোনার লক্ষন পরিলক্ষিত হয়নি বলে জানান তিনি।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশে ছয় লাখের বেশি প্রবাসী দেশে ফেরে বলে সরকারি তথ্যে জানানো হয়েছে।