পাবনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মার তীরে ভাঙন, বিলীন ফসলি জমি

পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তীরবর্তী পাবনার দুটি উপজেলার অন্তত ২০ গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে; তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2020, 04:18 AM
Updated : 13 March 2020, 04:45 AM

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানান, গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে পাবনা সদরের ভাঁড়ারা থেকে সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে ‘প্রভাবশালীরা’।

এর ফলে সদরের বাহিরচর, কোলচরী, চরভবানীপুর, বাগচীপাড়া. ভাদুরডাঙ্গী, সুখচর, সুজানগর উপজেলার চর খলিলপুর, নাজিরগঞ্জ, হাজারবিঘা, বিশ্বনাথপুর, সাগরকান্দি, চরসুজানগরসহ পদ্মাপাড়ের অন্তত ২০ গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

অসময়ে এমন ভাঙনে গ্রামগুললোতে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে উঠতি রবিশস্যসহ প্রায় আড়াই হাজার বিঘা ফসলি জমি। জীবিকা অর্জনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে এখন দিশাহীন হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

পাবনায় বিভিন্ন পয়েন্টে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, “আমরা অভিযানে যাওয়ার আগেই বিভিন্ন মহলের যোগসাজশে তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সফল হতে পারছি না।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১০ সালে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় পাবনা জেলা প্রশাসন বালুমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর কিছুদিন পর থেকে অনুমোদন ছাড়াই পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন শুরু করে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যুক্ত হয় এই অবৈধ কার্যক্রমে। এরপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে বালুদস্যুরা।

সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের বাহিরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে পদ্মা নদী থেকে বালু তুলছে শ্রমিকরা। নদী পাড়ে স্তূপ না করে শত শত ট্রলারে সেসব বালু অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

চর খলিলপুর গ্রামের কৃষক জিলাল ফকির বলেন, “সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ খাঁন, চরতারা ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হক টুটুলসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট এই বালু উত্তোলন করে।

“২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর পাবনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীরের ভাই আহমেদ ফররুখ কবীর বাবু ও জেলা পুলিশের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অবৈধ বালুদস্যুদের এই সিন্ডিকেটটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।”

বাহিরচর গ্রামের হোসেন আলী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শত অনুরোধেও এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেনি তারা। নদীর তলদেশ থেকে বালু তুলে নেওয়ায় আমাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে উঠতি মসুর ও সরিষাসহ আমার দশ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। আমরা বালু তোলা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”

অভিযোগের এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হক টুটুল বলেন, “বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নই। আমাদের দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম চালায়।”

ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খান বলেন, “আমার ইউনিয়নের সীমানার মধ্যে নদী থেকে বালু তোলা হয় না। ‘রাজনৈতিক ঈর্ষা’ থেকেই বার বার আমার নাম জড়ানো হয়।”

পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ প্রশাসনের সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “বালুমহাল জেলা প্রশাসনের আওতায়। বালু উত্তোলনের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই জড়িত নয়। বালু উত্তোলন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের যেকোনো অভিযানে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে আসছি।”

বালু উত্তোলনে প্রশাসনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে করছেন জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ। তিনি বলেন, “বালু উত্তোলন বন্ধে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে সব ধরনের ‘প্রভাবমুক্ত’ থেকে কাজ করা হচ্ছে।”