করোনাভাইরাস: কয়েক জেলায় পর্যবেক্ষণে বিদেশফেরতরা

করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে দেশে কয়েকটি স্থানে বিদেশফেরতদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যদিও তাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2020, 06:05 PM
Updated : 10 March 2020, 07:37 PM

এরমধ্যে রয়েছেন মানিকগঞ্জে ৫৯ জন, রাজবাড়ীতে ৫ জন, সিলেট ও চুয়াডাঙ্গায় একজন করে।

এছাড়া বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে বিদেশফেরত ৫৯ ব্যক্তিকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে জেলার সিভিল সার্জন একেএম আনোয়ারুল আমিন আখন্দ একথা জানান।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এরা মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িতে এসেছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩২ জন, শিবালয়ে ৬ জন, সাটুরিয়ায় ১৮ জন, দৌলতপুরে দুই জন এবং সিঙ্গাইরে একজন রয়েছেন।

চীন, ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তারা এসেছেন বলে সিভিল সার্জন জানান।

“এসব বিদেশফেরতদের মধ্যে চারজন নারী রয়েছেন। তাদের সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় (হোম কোয়ারেনটাইন) রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছে।”

তিনি বলেন, তাদের সবার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে; কারো স্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন বলেন, এই ৫৯ জন ও তাদের পরিবারের কাউকে বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

জ্বর নিয়ে কোনো বিমানযাত্রী আসছেন কি না, তা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে এই যন্ত্রের সাহায্যে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে সর্দি-জ্বরই প্রধান লক্ষণ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস জানান, মানিকগঞ্জ পৌরসভার কেওয়ারজানী এলাকায় আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনে নতুন ভবনে ১০০ শয্যার কোয়ারেনটাইন ইউনিট খোলা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হবে।

দামুড়হুদায় সৌদী ফেরত এক নারী হাসপাতালে ভর্তি

রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ইটালিফেরত বাবা-ছেলেসহ এক পরিবারের পাঁচ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তারা জঙ্গল ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান।

ইউএনও একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, গত ২ মার্চ বাবা ও ছেলে ইটালি থেকে দেশে ফিরেছেন। সোমবার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

“তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই। তারপরও অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের অপর দুই সদস্য ও গৃহকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই সাত দিন পার হয়েছে। বাকি সাত দিন তারা বাড়ির বাইরে বা কারও সংস্পর্শে যেতে পারবেন না। তাদের বাড়ির আশপাশে গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারা বসানো হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, “রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এধরনের কোনো রোগী আসেনি। তবে আমরা হাসপাতালে প্রস্তুতি নিয়ে আছি। বিদেশ থেকে কেউ জেলায় প্রবেশ করলে তারা অন্তত ১৪ দিন যেন বাড়ির বাইরে না যায় এবং কারও সঙ্গে চলাফেরা না করে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি।”

তিনি বিষয়টি নিয়ে কাউকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।

সিলেট

করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা পরীক্ষা করতে বলায় সিলেটে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সৌদি আরব প্রবাসী এক নারী পালিয়ে গেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল।

তবে পরে খোঁজ নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের লোকজন ওই নারীর বাসায় গিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি বলে প্রেমানন্দ জানান।

সিভিল সার্জন বলেন, ১০/১২ দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকার ৭০ বছর বয়সী ওই নারী। 

“মঙ্গলবার সকালে জ্বর নিয়ে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তিনি। সেখানে তার লক্ষণ দেখে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা।” 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর ঢাকায় ছোট বড় অনেকের মুখেই এখন মাস্ক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

প্রেমানন্দ বলেন, এ সময় তাকে কয়েকটি পরীক্ষা করিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। কিন্তু পরীক্ষা করিয়ে আনার কথা বলে ওই নারী হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান।

সিভিল সার্জন বলেন, “হাসপাতাল থেকে বিষয়টি অবহিত হয়ে আমরা ওই নারীর বাড়িতে যোগাযোগ করি। আমরা তাকে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতার জন্য শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করি; কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তাকে বাড়িতেই ‘সেলফ কোয়ারেন্টিনে’ থাকতে বলা হয়েছে।”

সিভিল সার্জন আরও জানান, বুধবার আবারও ওই নারী সাথে যোগাযোগ করে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা চালানো হবে।

এর আগে সিলেটের কানাইঘাটের এক দুবাইফেরত যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গত ৪ মার্চ শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন। পরে রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। গত রোববার তার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সিলেটে আসে। এরপর তাকে বাড়িতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চুয়াডাঙ্গা

সৌদি আরবফেরত ৬৫ বছর বয়সী জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত এক নারীকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, তিনি স্বাভাবিক জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বলেন, উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী এই নারী গত ৩১ জানুয়ারি ওমরা পালনের জন্য দুবাই হয়ে সৌদি আরব যান। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসেন। সৌদি আরবে থাকাকালে তিনি জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন।

“গত সোমবার তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আজ মঙ্গলবার তাকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকজন।”

ডা. আবু হেনা বলেন, তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই নিশ্চিতভাবে জানা যাবে ওই নারী করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা।

শেরপুর

শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা ও আলাদা রাখার জন্য বিভিন্ন্ হাসপাতালে ১৫০টি আলাদা শয্যা প্রস্তুতসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

শেরপুরের সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুর রউফ জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যা, ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা, শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা, নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫০ শয্যা ও নকলার উরফা মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫০ শয্যাসহ মোট ১৫০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

“এছাড়া শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের পরীক্ষার জন্য ৩ সদস্য করে দুটি মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।”

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ হলে তাদের রাখার জন্য নালিতাবাড়ী ও নকলার দুটি প্রতিষ্ঠানে ‘কোয়ারেন্টিন’ কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, যা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। দুটি উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল টিম করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গণসচেতনতার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিলি করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পূর্ণ জীবন চাকমা বলেন, “হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট একটি কক্ষ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখার মত সব ব্যবস্থাই আমরা করে রেখেছি। হাসপাতালগুলোতেও সে রকম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।”

এছাড়াও যেহেতু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পর্যটক খাগড়াছড়িতে আসেন, তাই পর্যটকদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পিরোজপুর

পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য চারটি বেড দিয়ে ‘আইসোলেসন ইউনিট’ করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। এছাড়া জেলা হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’।

জেলার সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকী বলেন, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো রোগী সনাক্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য আলাদা করে ‘আইসোলেসন ইউনিট’ তৈরি করা হয়েছে  এবং রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য চার জন ডাক্তার নিয়ে একটি ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।

পাবনা

পাবনার আটঘরিয়ায় করোনাভাইরাস সন্দেহে বিদেশ ফেরত এক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন মির্জা মেহেদী ইকবাল জানান।

নীলফামারী

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সার্বিক ভাবে প্রস্তুতনীলফামারী জেনারেল হাসপতাল। এজন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘আইসোলেশন ইউনিট’। প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, আয়া, সুইপার। গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের জেলা কমিটি, উপজেলা পর্যায়ে পাঁচ সদস্যের র‌্যাপিড রেসপন্স টিম। স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন স্থরে সচেতনতামূলক সভা।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুল হাসান চৌধুরীর বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে পেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৮ শয্যার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। জেলা উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে হাসপাতালে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির একজন সদস্য বদলি হওয়ায় গত সোমবার সেই কমিটি পুণঃগঠন করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন, “করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি গত ৪ মার্চ জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভাপতি করে ছয় উপজেলা কমিটি গঠন হয়েছে। এ সংক্রান্ত একাধিক সভাও হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীদের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইভমেণ্ট পরিমানে কম মজুদ আছে। এজন্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। আজ পুণরায় পাঠানো হচ্ছে।”

মাগুরা

আসাদের শরীরে করোনার অস্তিত পাওয়া যায়নি

মাগুরায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন-সিভিল সার্জন কার্যলয়ের মেডিকেল অফিসার অন্তরা বিশ্বাস, ডাব্লিওএইচওর প্রতিনিধি ডা. মুনদেব রাজিব। সেমিনারে বিশেষজ্ঞ বক্তব্য রাখেন সহকারী অধ্যাপক ডা. দেবাশিষ বিশ্বাস।

সেমিনারে সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, এক মাস আগে চীন থেকে ৩ জন,  ১৫ দিন আগে ইতালি ও বাহারাইন থেকে ৩ জন মাগুরায় এসেছেন। তবে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের চলাচল নিজ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরা শনাক্তের পর ঢাকায় ছোট বড় অনেকের মুখেই এখন মাস্ক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“মাগুরায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ২০ বেড ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ৫ বেডের বিষেশায়িত ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়া মাগুরা মেডিকেল কলেজ এর একটি চার তলা ছাত্রবাসকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

গাইবান্ধা

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গাইবান্ধায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে জেলা ও সাত উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যাপিড রেসপন্স টিমও গঠিত হয়েছে।

গাইবান্ধা সদর জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট নাজমুল ইসলাম বলেন, গাইবান্ধা সদর জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় খোলা হয়েছে ‘আইসোলেশন ইউনিট’। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৫ শয্যাবিশিষ্ট এই ইউনিট খোলা হয়। ইউনিটটি হাসপাতাল থেকে আলাদা।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠিত হলেও করোনাভাইরাস বিষয়ে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে কর্মরত নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এখনও আনুষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনারে করোনা ভাইরাস বিষয়ে আলাপ আলোচনা ও এবিষয়ে বিস্তারিত জানানো হচ্ছে।

“করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য মাস্ক ও গাউনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রয়েছে। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক ও গাউনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মাস্ক ও গাউন উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে।”

বাগেরহাট

বাগেরহাটে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সভা করেছে প্রস্তুতি কমিটি।

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, “করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আপাতত সব ধরনের জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করব, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচারপত্র বিলি করব। জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসমাগম ছাড়াই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মসজিদে মসজিদে ইমামরা প্রচারণা চালাবেন। জেলা ও উপজেলাগুলোতে চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি করে রেসপন্স টিম গঠন করা হবে।” বাগেরহাট সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালসহ জেলার নয়টি উপজেলা হাসপাতালে আলাদা পাঁচ শয্যার একটি ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। খোলা হয়েছে হটলাইন। ৮ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা সদরে ২০০ রোগী ও উপজেলা সদরে ১০০ জন ভাইরাস সংক্রমিত রোগীকে যাতে পর্যবেক্ষণে নেওয়া যায় তারও প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।