গৃহবধূকে দিয়ে থুথু চাটানোর মামলায় চেয়ারম্যান

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অপবাদে এক গৃহবধূকে মারধর ও থুথু চাটানোর অভিযোগে নীলফামারীর এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2020, 04:09 PM
Updated : 9 March 2020, 04:09 PM

শনিবার ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ডোমার থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন।

ওই মামলায় রতন (৩২) নামের এক আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গত বুধবার (৪ মার্চ) ভোগডাবুরী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে আদর্শপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ (৪৫) অভিযোগ করেন, তার স্বামী ঢাকায় রিকশা চালান। তিনি ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকেন।

তিনি বলেন, গত ১৮ বছর থেকে তার এক পাতানো ভাই (৭০) তাকে এবং তার মেয়েকে দেখাশোনা করে আসছেন। গত বুধবার (৪ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ওই ভাই তাদের বাড়ি গিয়ে বাজার দিয়ে চলে যান।

তিনি বলেন, কিন্তু পথে এলাকার ছয় জন বখাটে ব্যক্তি তার ভাইকে আটক করে। পরে তারা ইউপি চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ি উপস্থিত হন।

“আমার সঙ্গে ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে আমাদের দুই জনকে মারধর করে মাটিতে থুথু ফেলে তা আমাদের চেটে খাওয়ান ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই বখাটেরা। এক পর্যায়ে সালিশ বসিয়ে আমার ও আমার মেয়ের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বীকারোক্তিমূলক মুচলেকা নেন চেয়ারম্যান।”

গৃহবধূ আরও বলেন, একই সঙ্গে তার ভাইকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় লোক পাঠিয়ে ভাইয়ের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু নিয়ে যান চেয়ারম্যান। পরদিন ওই গরু হাটে বিক্রি করা হয়।

এদিকে, ওই গৃহবধূর স্বামী মামলায় অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তিনি ঢাকা ছিলেন। গত শুক্রবার বাড়ি ফিরে স্ত্রী-মেয়ে ও এলাকাবাসীর কাছে বিস্তারিত ঘটনা শোনেন। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হককে প্রধান আসামি করে স্থানীয় আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে ডোমার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, “আমারর স্ত্রীর সঙ্গে ওই লোকের ভাই-বোনের সর্ম্পক। গত ১৮ বছর থেকে তিনি আমার স্ত্রীকে নিজের বোন, আমার মেয়েকে ভাগ্নি এবং আমাকে ভগ্নিপতির মর্যাদা দিয়ে আসছেন। আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রী ও মেয়ের দেখাশোনা করে আসছেন। আমার স্ত্রীর সাথে ইব্রাহিমের ভাই-বোনের পবিত্র সর্ম্পক রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

এ বিষয়ে ভোগডাবুরী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক বলেন, “স্থানীয় লোকজন তাদের আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন। সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা শুনে আমি সেখানে যাই। পরে তারা ভুল স্বীকার করলে স্থানীয়রা ওই লোককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।”

গরু নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “ওই লোক নিজেই এক ব্যবসায়ীর কাছে গরুটি বিক্রি করেছেন এবং ওই ব্যবসায়ীকে বলে দেন যেন গরু বিক্রয়ের ২০ হাজার টাকা আমাকে দেয়।”

তিনি বলেন, “আমি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। ওই ২০ হাজার টাকা ওই নারীর স্বামীকে দেওয়ার জন্য আমার কাছে রাখি। তিনি ঢাকা থেকে আসলে আমি ওই টাকা তার হাতে দিয়ে দিব। কিন্তু ওই নারীর স্বামী ঢাকা থেকে আসার পর আমার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ না করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা করে দিলেন।”

তবে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক মুচলেকায় স্বাক্ষর নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এই চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে ডোমার থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৭ মার্চ ডোমার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

“তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়।”

ওসি বলেন, রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার ৭ নম্বর আসামি রতনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮ মার্চ সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রধান আসামিসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।