নকলের দায়ে সাজা খেটেও পেলেন প্রাথমিকে শিক্ষক পদে নিয়োগ

টাঙ্গাইলে সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নকলের অপরাধে সাজা পাওয়া একজনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2020, 07:20 PM
Updated : 6 March 2020, 08:56 PM

নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক হলেন মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. রাজিব হোসেন। 

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করায় কমিটি তাকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়। গত ৩ মার্চ উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

রাজিব বলেন, গত বছর ২৪ মে টাঙ্গাইল জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্বে আমি পরীক্ষায় অংশ নিই।

এ নিয়োগ পরীক্ষায় নকল করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে সাত দিনের সাজা দেয় উল্লেখ করে রাজিব বলেন, “আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলাম না। আমাকে অযথা জড়ানো হয়েছে।

“তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা তো তেমন একটা গুরুত্ব না। এমনিতেই আমি ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম।”

রাজিব জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজের এবং তার স্ত্রী শান্তাসহ কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে উত্তর সরবরাহ করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

ওই পরীক্ষায় অংশ নেন রাজিবের বন্ধু সেলিম রেজা; তিনি মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের আটিয়া মামুদপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে।

সেলিম বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায়ের ঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় কয়েকজনকে আটক করে। পরীক্ষা শেষে রাজিব, স্ত্রী শান্তা এবং আমি মির্জাপুর চলে আসি।

“পরে আটককৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজিব ও আমাকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইলের ডিবি পুলিশ।”

গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইলের নেজারত ডেপুটি কালেকটর (এনডিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ জামানের আদালতে হাজির করলে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে তাদের কথায় বেরিয়ে এসেছে। পরে তাদের নামে দুটি মামলা হয়।

উচ্চ আদালতে আপিল না করার বিষয়টি জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ভাই মানুষের শত্রুতার কারণে আমি খণ্ডকালিন শিক্ষকতার চাকরি হারিয়ে সিএনজি চালিয়ে কোন রকম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালাচ্ছি।

তবে তিনি রাজিবকে নির্দোষ দাবি করেন।

আদালতের পেশকার মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, রাজিবের বিরুদ্ধে ৭ দিনের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড প্রদান করেছিল।

২০১৭ সালের শেষের দিকে মির্জাপুর সদরের সরকারি এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।

ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত এ শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, রাজিব হোসেন ও সেলিম রেজা উভয়েই সদরের সরকারি এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

“এ ধরণের সাজা হওয়ায় পুণরায় তাদেরকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠদানের সুযোগ দেয়া হয়নি।”

নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ বলেন, নিয়োগের আগে আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য ছিল না।

“যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই এ সংক্রান্ত পুলিশি তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

এ নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের বলেন, “নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। তাতে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”