বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা সদরের সাপ্তাহিক লালমনিরহাট বার্তা পত্রিকা অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে দিনমজুর মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন তার চাচা জামায়াত নেতা মিজানুর রহমান তার খামারে বিষ দিয়ে মুরগি মারা ছাড়াও বাড়ির রাস্তা আটকে নাজেহাল করছেন।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটির খোলাহাটি গ্রামে রাস্তার পাশে জামায়াত নেতা কাজী আমিনুরের পাকা বাড়ি। এ বাড়ির পেছনে সীমানা ঘেঁষে মিজনুরের বসতভিটা ও মুরগির খামার।
দীর্ঘদিন ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করে কিছু জমানো টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। ২০১৮ সালে শুরু করেন মুরগির খামার। এজন্য দাদন ও সুদেও টাকা ঋণ নিয়ে তৈরি করেন এক হাজার মুরগির শেড।
সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর লিখিত বক্তব্যে বলেন, জামায়াত নেতার বাড়িতে অচেনা লোকের আনাগোনা দেখে ফেলায় এবং পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে কথা বলতে গেলে জামায়াত নেতার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও হাবিবুর রহমান রড দিয়ে ‘বেধড়ক মারপিট করে আহত’ করেন মিজানুরকে বলেও অভিযোগ করেন এ সম্মেলনে।
হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এ ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর মিজানুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানান।
মুরগি খামারী মিজানুর বলেন, “মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জামায়াত নেতা আমিনুর ইসলাম তাকে শায়েস্তা করতে সন্ত্রাসী ভাড়া করেন। গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী বলরাম ও রফিকুল নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়ি তল্লাশি করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।”
এ সময় মারধর করে মাদকের মামলায় তাকে চালান দেওয়ার চেষ্টাও করে তারা উল্লেখ করে তিনি জানান, খবর পেয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির শহরের ড্রাইভার পাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন ভুক্তভোগী মিজানুর।
সংবাদ সম্মেলনে ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সাথে জামায়াত নেতার’ কথোপথনের অডিও রেকর্ড শোনানো হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিজানুরের খামারের ৩শ ব্রয়লার মুরগি একসাথে মারা যায়। মিজানুরের সন্দেহ-এ জামায়াত নেতা খাদ্যে বিষ প্রয়োগ করে এসব মুরগি মেরেছেন।
মিজানুরের বাবা মনির উদ্দিন বলেন, “হামরা বাহে গরিব, অশিক্ষিত মানুষ। মানুষের বাড়িত কামলা খাটি খাই (দিনমজুরি) করে হামার সংসার চলে।
“হামার ছোট ভাই আমিনুর ইসলাম ‘হরিন চওড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের’ মওলানা শিক্ষক, বিবাহ নিকাহ রেজিস্টার ও সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর।
“তার বাহে এত ধনসম্পদ লাগে। ওর এত কিছু হওয়ার পরও হামরা কাকো তার পরিচয় দেই না। তার পরিচয় দিতে হামাক লজ্জা লাগে।”
খোলাহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী বুলু জানান, চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকায় মিজানুরের পরিবার স্কুলের মাঠ দিয়ে যাতায়াত করছেন।
“স্কুলের সীমানা প্রাচীর হলে ওই পরিবার বিপদে পড়বে।”
মিজানুরকে উদ্ধারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ওই দিন মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মিজানুরকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করি।
“জামায়াত নেতা এই পরিবারে উপর নির্যাতন চালাচ্ছেন।”
এদিকে, এ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর আমিনুর ইসলাম বলেন, “এটা ষড়যন্ত্রমূলক।
“তাকে ফাসানোর জন্য মিজানুর নাটক সাজিয়েছে।”
এদিকে, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।