এবার ওমরায় গিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী নিখোঁজ

দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজের দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র এবার ওমরাহ করতে গিয়ে আর ফেরেননি। পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি বলে স্বজনরা জানান।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2020, 12:51 PM
Updated : 4 March 2020, 02:59 PM

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। এদের মধে্যে একই নামের একজন আবার ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তাকে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে।

অপরজন নিখোঁজের এক সপ্তাহ পরে ফিরে আসেন বাড়িতে।

ওমরা করতে গিয়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী আল আমিন, ফাহিম হাসান খান, শেখ মিজানুর রহমান ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল মোমেন।

তারা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতেন।

ময়মনসিংহের সাদমান ট্রাভেল এজেন্সির হাসানুজ্জামান নামের এক কর্মী বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি আল-আমিন, “শেখ মিজানুর রহমান হক তাদের এজেন্সির মাধ্যমে এবং ফাহিম ও আব্দুল মোমেন বিএসএস ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান ওমরা পালনে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর ওমরা না করে অন্য কোথাও চলে যান।”

তিনি বলেন, ওমরায় গিয়ে আবার ফিরে আসবে এটাই স্বাভাবিক। আবার মাঝেমধ্যে দেখা যায় কেউ কেউ সেখান থেকে পালিয়ে যায় অবৈধভাবে কাজ করার জন্য-এরকমও হতে পারে। তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলেও জানান হাসানুজ্জামান।

হাসানুজ্জামান আরও বলেন, “নিখোঁজদের পরিবারের লোকজন একবার আমাদের অফিসে এসেছিলেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।”

নিখোঁজ ফাহিমের বাবা-মা বলেন, ওমরায় যাওয়ার আগে সবশেষ কথা হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আজাহারুল ইসলাম বলেন, “আমি ছুটিতে আছি। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। আপনারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।”

ময়মনসিংহ জেলার এসপি আহমার উজ্জামান বলেন, “এখন তারা কাজের সন্ধানে সেখানে থেকে গেল, নাকি অন্যকিছু আছে সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি ভেটেরিনারি অনুষদের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র শেখ ইফতেখারুল ইসলাম আরিফ নিখোঁজ হন। আরিফ থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুল হক হলে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, হলের সিসিটিভি ক্যামেরায় ৯ জানুয়ারি ভোরে ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হতে দেখা যায় শেখ ইফতেখারুল ইসলাম আরিফকে। পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

একমাস পর (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট শেখ ইফতেখারুল ইসলাম আরিফ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। শেখ ইফতেখারুল ইসলাম আরিফ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য।

তবে ঢাকায় গ্রেপ্তার আরিফ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ইফতেখারুল ইসলাম আরিফ কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  

আরিফ নিখোঁজের একমাস পর (৬ ফেব্রুয়ারি) নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র আহসান হাবিব হামজা। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি বাড়ি ফিরে যান। হামজা থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ নাজমুল আহসান হলে।

হামজার স্বাজনরা জানান, হামজা ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি শপিং ব্যাগ হাতে হল থেকে বের হন। বাড়ি যাবেন বলে তিনি তার বাবাকে ফোনে জানিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি বাড়িও যাননি হলেও ফেরেননি। পরদিন সকাল থেকে হামজার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার বাবা ও ভগ্নিপতি শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ করতে যান।

হামজার বাবা মো. আব্দুল মোতালেব জানান, হামজা ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টার দিকে তার বোনের ফোনে মেসেজ দেন। মেসেজে তিনি লিখেন- ‘আমি ভালো আছি, কেউ যেন দুশ্চিন্তা না করে। আমি বাড়িতে আসছি।’

“পরে রাত ৮টার দিকে হামজা বাড়িতে আসে। পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করলে রাত ১০টার দিকে হামজাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।”

এ ব্যাপারে এসপি আহমার উজ্জামান বলেন, তার মধে্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের কিছুটা ভাব আছে। সে বিষয়ে কাউন্সেলিং করে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হামজার উদ্ধৃতি দিয়ে এসপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি বাড়ির সবার সঙ্গে অভিমান করে চট্টগ্রাম চলে যান। পরে একটি দৈনিক পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ দেখে বোনের ফোনে মেসেজ দেন এবং পরে বাড়িতে ফিরে যান।