পুলিশের চেয়ে আমার বেশি অস্ত্র ছিল: শামীম ওসমান

২০০১ সালের আগে নারায়ণগঞ্জের পুরো পুলিশ ফোর্সের চেয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের কাছে বেশি অস্ত্র ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2020, 04:48 PM
Updated : 1 March 2020, 04:54 PM

রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান একথা বলেন।

জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “২০০১ সালের আগে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ফোর্সের কাছে যে অস্ত্র ছিল, তার চেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল আমার কাছে; মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু আজকে আমার গাড়িতেও অস্ত্র আছে কিনা আমি জানি না।” 

তিনি বলেন, “আমি গতকাল এসপি সাহেবকে লিস্ট দেখিয়েছিলাম। পঁচাত্তরের পর থেকে আমাদের কতজন মারা গেল? দেখলাম ৫০ জনের ওপরে মারা গেল। কিন্তু একটা হত্যার বিচারও পাই নাই। ২০০১ সালে বোম ব্লাস্ট হলো, মারা গেলাম, কিস্তু বিচার পাই নাই। কিন্তু আমরা বাঁচব কয় বছর?” 

শামীম ওসমান তার কাছের লোকদেরও খাতির না করার আহ্বান জানান পুলিশের প্রতি।

“কোনো মাস্তান, বন্দুকবাজ ও লাঠিয়াল বাহিনীর আমার দরকার নেই। কারণ, আমি নিজেই জানি আমার থেকে বড় মাস্তান আর কেউ নাই।”

অন্য কোনো দলকে দমন করার জন্য তার পুলিশের দরকার নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শামীম ওসমান বলেন, “রাতের বেলা ডাকলে এখনও দুই লাখ লোক বের করতে এক ঘণ্টা সময় লাগে; ওই ক্যাপাসিটি আমার আছে। ’৭৯ সনে জিয়াউর রহমানকে আটকে রাখার লোক আমরা। কীভাবে আন্দোলন করতে হয় আর কীভাবে আন্দোলন ঠেকাতে হয় আমরা সেটা জানি।”

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, “আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই কনসেপ্টটা বদলে হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সেবক। আর আমরাও (নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি) প্রজাতন্ত্রের সেবক এখন। পার্থক্যটা হলো, আপনার মেনটালিটিটা কী। আপনি কীভাবে এই সেবক হবেন, না শাসক হবেন।”

এখানে কেউ ক্ষমতায় এসে শাসক হতে চায়; আবার কেউ ক্ষমতায় থেকে সেবক হতে চায় বলে মন্তব্য করেন এই সাংসদ।

তিনি বলেন, “ইদানীং আমি একটু ওয়াজে যাই। অনেকেই এ নিয়ে টিটকারি মারেন। বাট আমি দুই বেলা কোরআন শরিফ পড়ি। আমি বাইশ বছর ধরে তাহাজ্জুত নামাজ ছাড়ি নাই।” 

শামীম ওসমান বলেন, “কালকে বাঁচব কিনা আমি জানি না। আপনারা পুলিশ। আপনারা সম্মানিত পেশায় চাকরি করেন। পৃথিবীর অন্য দেশে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশার ভেতরে এটি অন্যতম। এটি সম্মানিত পেশা। এই জায়গাটাতে বাংলাদেশের পুলিশ মোটামুটি এসে গেছে। আর কিছু দিন পরই হয়তো আসবে। ২০১৩-১৪ সালে আপনাদের (পুলিশ) ওপর যে কী নৃশংস হামলা হয়েছে, এটা তো আমাদের চোখেই দেখা।”

সারা দেশে যখন আগুন সন্ত্রাস চলছে তখন নারায়ণগঞ্জে কিছুই করতে পারে নাই- এই ক্রেডিট নারায়ণগঞ্জের মানুষের এবং পুলিশের যৌথভাবে, বলেনে তিনি।

তিনি বলেন, “সেসময় সদর থানার ওসি ছিল মঞ্জুর কাদের। তার উপর একটি বাড়ি থেকে এসে হামলা চালানো হলো। ওই বাড়ি থেকে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা এসে ওর উপর হামলা করল। তখন চাষাড়ার সকল হকারকে আমরা পলিটিক্যাল মটিভেশন করেছিলাম। এর জন্য হকারদের প্রতি আলাদা একটা টান আছে।

“তারা লাঠি নিয়ে পাহারা দিত। যে মুহূর্তে পুলিশের উপর অ্যাটাক হয়েছিল এই টোটাল হকাররা লাঠি নিয়ে তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছিল। এ কারণেই ওরা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে নাই।”

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি শাহ নেওয়াজ প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, আতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, র‌্যাব-১১ এর সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক, বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান প্রমুখ।