রোববার (১ মার্চ) রাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা রক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।
কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার একশ কিলোমিটার এবং ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার ইলিশ অভয়াশ্রমে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস তালিকাভুক্ত জেলেদের খাদ্য সহায়ত দেয় সরকার। কিন্তু অনেক জেলে এই সহায়তা না পাওয়ায় কর্মসূটির পূর্ণ সফলতা আসছে না।
জেলেদের অভিযোগ, তাদের জন্য আসা সহায়তা কার্ড টাকার বিনিময়ে অন্যান্য পেশার মানুষদের দেওয়া হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, জাটকা রক্ষাকল্পে ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত একশ কিলোমিটার এলাকায় এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে জেলেদের ৪০ কেজি করে ৪ মাস খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেয়া হয়।
এছাড়া এক হাজার জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে রিকশা, ভ্যান, হাঁস-মুরগি ও সেলাই মেশিন দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
কিন্তু চাঁদপুরের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও জেলে সংগঠনের নেতারা টাকার বিনিময়ে প্রকৃত জেলেদের বাইরে যারা মাছ ধরার কাজে জড়িত নয় এমন লোকজনকেও জেলে কার্ড দিচ্ছেন বলে জেলেদের অভিযোগ।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে জাটকা নিধন করার পেছনে এটি একটি কারণ বলে ধারণা করা হয়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরানবাজার, রনগোয়াল, হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলেরা বলেন, তারা যারা দীর্ঘদিন ধরে নদীতে মাছ ধরা পেশার সাথে জড়িত আছেন এমন অনেকেই সরকারি সহায়তা পান না। কিন্তু স্বজনপ্রীতি করে অনেক জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য নেতারা টাকার বিনিময়ে অন্যান্য পেশার মানুষকে জেলে সহায়তার কার্ড দিয়েছেন। এতে করে প্রকৃত জেলেরা সহায়তা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে যান জাটকা শিকার করতে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “জাটকা রক্ষায় আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জাটকা রক্ষায় দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে আমরা নদী পাহারা দেব। এতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, কোস্টগার্ডসহ আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কোনো অবস্থাতেই নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে কোনো জেলেকে নদীতে নামতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৫১ হাজার ৯৮৯ জন জেলে। সব জেলেকে নিষিধকালীন সময়ে সরকারি সহায়তার আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
“অর্থের বিনিময়ে জেলে কার্ড বিক্রির বিষয়টি আমরা অবগত নই। কেউ অর্থের বিনিময়ে জেলে কার্ড বিক্রির সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক মো. আনিছুর রহমান বলেন, গতবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হওয়ায় এবছর শীতের মৌসুমেও প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া গেছে নদীতে। জাটকা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আগামীতেও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষা কর্মসূচিতে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, জেলেদেরকে জাটকাসহ সকল ধরনের মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। নদী উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা, জেলে পাড়ায় লিফলেট বিতরণ ও আড়ৎগুলোতে ব্যানার সাঁটানোসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
“এই অভিযানে আইন অমান্য করে জেলেরা নদীতে জাল ফেলে জাটকা ইলিশ নিধন করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।”
আজহারুল ইসলাম জানান, ভোলা জেলায় ৭০ হাজার ৯৪৩টি নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এসব জেলেদের প্রত্যেক পরিবারকে ৪০ কেজি করে ৫৬৭৫ দশমিক ৪৪ টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার জেলে সিরাজ, আলাউদ্দিন ও আব্দুর রহিম বলেন, মেঘনায় নিষিদ্ধ সময়ে যেই পরিমাণ চাল দেওয়া হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই নিষিদ্ধ সময়ে চালের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান কিংবা আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল বলেন, জেলেরা যাতে ইলিশ শিকার না করে সে জন্য প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। ভোলা জেলায় জেলেদের চাহিদার তুলনায় বরাদ্ধ কম হওয়ায় সকল জেলেদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়।