শনিবার সকালে শহরের হাড়োয়া গ্রামে ‘গোল্ডেন টাইমিং মেনুফ্যাকচারিং লিমিটেডের’ ২৯ জন নারী শ্রমিক এ রোগে অসুস্থ হয়ে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে একর পর এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রায় দুই হাজার ৪০০ শ্রমিকের কর্মস্থল এ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে, শ্রমিকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে শহরেও আতঙ্ক দেখা দেয়।
তবে শ্রমিকদের সবারই অসুস্থতার ‘উপসর্গ একই’ উল্লেখ করে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন, “মনস্তাত্বিকভাবে সাধারণত এটা হয়, এটাকে গণহিস্টিরিয়া বলা হয়।”
তিনি জানান, সকালে নারী শ্রমিকরা অসুস্থ্ হয়ে হাসপাতালে আসতে শুরু করেন।
এরইমধ্যে চিকিৎসাধীন এ শ্রমিকদের অনেকে সুস্থ্ হয়ে উঠছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আশা করছি আজকের মধ্যে তারা সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।”
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ দেড়েক রোগীর মধ্যেও জনা দশেক রোগী হাসপাতাল ছেড়েছিলেন।
রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার কথা স্বীকার করে সহকারী পরিচালক মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন,“অন্য রোগীরা করোনাভাইরাস আক্রান্তের গুজবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন। পরে আস্বস্ত হয়ে সবাই হাসপাতালে ফিরে আসেন।”
গোল্ডেন টাইমিং মেনুফ্যাকচারিং লিমিটেড নামের কারখানাটি উত্তরা ইপিজেডের পরচুলা তৈরি কারখানা এভারগ্রিন প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক চীনের নাগরিক বলে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এভারগ্রিন প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের উপ-মহা ব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আলম বলেন, তাদের তেমন কোন গুরুতর সমস্যা হয়নি। তারা আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছেন।
“ঘটনার পর আমরা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং কারখানা ছুটি দিয়েছি।”
কারখানায় পরচুলার কাজে কোন ধরণের কেমিকেল ব্যবহার করা হয় না বলেও জানান তিনি।
হঠাৎ কীভাবে এ রোগ দেখা দিল তার বিবরণ দিতে গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিক সীমা রানি (২০) বলেন,“সকাল ৭টায় কারখানার কাজ শুরুর দুই ঘণ্টা পর হঠাৎ আমার মাথা ব্যথা শুরু করে।
“ব্যথার যন্ত্রণায় আমার বমি শুরু হলে-জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেড়ে।”
অপর শ্রমিক নিপা রায় (১৯) বলেন, “অন্যদের অসুস্থ্ হতে দেখে ভয়ে আমিও অসুস্থ্ হয়ে পড়ি।
“হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এখন অনেকটা সুস্থ্ বোধ করছি।”
আরেক শ্রমিক হাসিনা বেগম (২০) বলেন, “সকাল ১০টার দিকে দুই শ্রমিক বমি করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে যান। এ অবস্থায় একের পর এক অসুস্থ হতে থাকেন।
“আমরা ভয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসি। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দেয়।”